সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ সহ লিখ
উত্তর:
1. দ্বন্দ্ব
সমাস
সমাস হচ্ছে দুই বা ততোধিক পদের একপদীকরণ। যেমনঃ সু (শোভন) ব্রত যাহার = সুব্রত।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, পরস্পর অর্থসঙ্গতিবিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমন— পণ হতে মুক্ত = পণমুক্ত।
অর্থবাচকতা
সমাস
শব্দের
অর্থ
সংক্ষেপ,
সমর্থন,
সংগ্রহ,
মিলন।
প্রকারভেদ
সমাস সাধারণত ছয় প্রকার। যথা:
১। দ্বন্দ্ব সমাস ২। কর্মধারয় সমাস
৩। তৎপুরুষ সমাস ৪। দ্বিগু সমাস
৫। অব্যয়ীভাব সমাস ও ৬। বহুব্রীহি সমাস।
যে সমাসে
সমস্যমান
প্রত্যেক
পদের
অর্থই
প্রধানরূপে
প্রতীয়মান
হয়, তাকে
দ্বন্দ্ব
সমাস
বলে।
যেমনঃ
রূপ ও রস ও গন্ধ ও শব্দ ও স্পর্শ = রূপরসগন্ধশব্দস্পর্শ; অন্ন ও বস্ত্র = অন্নবস্ত্র।
2.
বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে মূখ্যভাবে সমস্যবান পদসমূহের অর্থপ্রতীতি না হয়ে অন্য পদের অর্থ মূখ্যরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথাঃ পীত হইয়াছে অম্বর যাহার = পীতাম্বর (অর্থ শ্রীকৃষ্ণ)। এর ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের প্রয়োগ থাকে।
যে সমাসে মূখ্যভাবে সমস্যবান পদসমূহের অর্থপ্রতীতি না হয়ে অন্য পদের অর্থ মূখ্যরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথাঃ পীত হইয়াছে অম্বর যাহার = পীতাম্বর (অর্থ শ্রীকৃষ্ণ)। এর ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের প্রয়োগ থাকে।
3.
কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে।
কর্মধারয় সমাস প্রধানতঃ চার প্রকার। যথাঃ-
বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে।
কর্মধারয় সমাস প্রধানতঃ চার প্রকার। যথাঃ-
1.
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসঃ কর্মধারয়
সমাসে
কোন কোন স্থানে
মধ্যপদের
লোপ হয়।
সেজন্যেই
একে মধ্যপদলোপী
কর্মধারয়
সমাস
বলে।
যথাঃ
হিমালয়
নামক
পবর্ত
= হিমালয়পবর্ত।
এখানে
‘নামক’
মধ্যপদের
লোপ হয়েছে।
2.
উপমিত কর্মধারয় সমাসঃ সমান
ধর্মবাচক
পদের
প্রয়োগ
না থাকলে
উপমেয়
ও উপমান
পদের
যে সমাস
হয়, তাকে
উপমিত
কর্মধারয়
সমাস
বলে।
যেমনঃ
মুখ চন্দ্রসদৃশ
= মুখচন্দ্র।
3.
রূপক কর্মধারয় সমাসঃ উপমেয়
পদে উপমানের
আরোপ
করে যে সমাস
হয়, তাকে
রূপক
কর্মধারয়
সমাস
বলে।
এতে উপমেয়
পদে রূপ শব্দের
যোগ থাকে।
যেমনঃ
বিদ্যারূপ
ধন = বিদ্যাধন।
এখানে
‘রূপ’ শব্দের
যোগ রয়েছে।
4.
উপমান কর্মধারয় সমাসঃ উপমানবাচক
পদের
সাথে
সমান
ধর্মবাচক
পদের
মিলনে
যে সমাস
হয়, তাকে
উপমান
কর্মধারয়
সমাস
বলে।
যেমনঃ
শশের
(খরগোশের)
ন্যায়
ব্যস্ত
= শশব্যস্ত।
4.
তৎপুরুষ সমাস
দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত।
তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-
দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত।
তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-
1.
দ্বিতীয়া-তৎপুরুষঃ দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত
পদ পূর্বে
থেকে
সমাস
হলে, তাকে
দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ
বলে।
যেমনঃ
স্বর্গকে
গত = স্বর্গগত।
2.
তৃতীয়া-তৎপুরুষঃ তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।
3.
চতুর্থী-তৎপুরুষঃ চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত
পদ পূর্বে
থেকে
সমাস
হলে, তাকে
চতুর্থী-তৎপুরুষ
বলে।
যেমনঃ
যজ্ঞের
নিমিত্ত
ভূমি
= যজ্ঞভূমি।
4.
পঞ্চমী-তৎপুরুষঃ পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।
5.
ষষ্ঠী-তৎপুরুষঃ ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।
6.
সপ্তমী-তৎপুরুষঃ সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত
পদ পূর্বে
থেকে
সমাস
হলে, তাকে
সপ্তমী-তৎপুরুষ
বলে।
যেমনঃ
দিবাতে
নিদ্রা
= দিবানিদ্রা।
এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।
এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।
5.
দ্বিগু সমাস
তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। তদ্ধিতার্থে, যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু। উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। [এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে]। সমাহারে, যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোকী।
তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। তদ্ধিতার্থে, যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু। উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। [এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে]। সমাহারে, যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোকী।
6.
অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।
অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।
অন্যান্য সমাস
1.
নিত্য সমাসঃ যে সমাসে
সমস্যমান
পদ দ্বারা
সমাস-বাক্য
হয় না, অন্য
পদের
দ্বারা
সমস্ত
পদের
অর্থ
প্রকাশ
করতে
হয়, তাকে
নিত্য
সমাস
বলে।
যেমনঃ
অন্য
গ্রাম
= গ্রামান্তর।
2.
উপপদ সমাসঃ কৃদন্ত-পদের
পূর্বে
যে পদ থাকে,
তাকে
উপপদ
বলে এবং উপপদের
সাথে
কৃদন্ত-পদের
যে সমাস
হয়, তাকে
উপপদ
সমাস
বলে।
যেমনঃ
কুম্ভ
করে যে = কুম্ভকার।
3.
প্রাদি সমাসঃ প্র, পরা প্রভৃতি
২০টি
উপসর্গের
সাথে
তৎপুরুষ
সমাস
হলে, তাকে
প্রাদি
সমাস
বলে।
যেমনঃ
সম্ (সম্যক্)
যে আদর = সমাদর।
No comments