২.বাংলা শব্দের সন্ধি কাকে বলে উদাহরণ সহ বিস্তারিত লিখ?

বাংলা শব্দের সন্ধি
খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের যে সন্ধি, সেগুলোকেই বাংলা শব্দের সন্ধি বলে। বাংলাতে এই সন্ধি ঘটে থাকে দুই ভাবে। বাংলা স্বরসন্ধি বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি
১। বাংলা স্বরসন্ধি
বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা স্বরসন্ধি বলা হয়। নিচে বাংলা স্বরসন্ধি সমূহ দেখানো হলো-
বাংলা স্বরসন্ধির সূত্রাবলী
১। + = পোস্ট +অফিস =পোস্টাফিস
২। + = থাল + =থালা
৩। + = তাঁত + =তাঁতি
৪। + = দুষ্ট + =দুষ্টু
৫। + = শত + এক =শতেক
৬। + = শাঁখা + আরি =শাঁখারি
৭। + = যা + ইচ্ছেতাই =যাচ্ছেতাই
৮। + = ঢাকা + ঈশ্বর =ঢাকেশ্বর
৯। + = মিথ্যা + উক =মিথ্যুক
১০। + = আমা + =আমায়
১১। + = ঘড়ি + ইয়াল =ঘড়িয়াল
১২ + = দই + =দইয়ে
১৩। + = ইও বাড়ি + ওয়ালা =বাড়িওয়ালা
১৪। + = ঈদ + উৎসব =ঈদোৎসব
১৫। + = য়া বাবু + আনা = বাবুয়ানা
১৬। + = মেয়ে + আলি = মেয়েলি
১৭। + = বোঁদে + এর = বোঁদের
১৮। + =য়া শো + = শোয়া
১৯। + = আলো + = আলোয়
ব্যতিক্রম : কুড়ি + এক = কুড়িক
বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি :
বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের কিম্বা ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধিজাত ধ্বনি গুলো সংস্কৃত সন্ধির অনুরূপ নয়। এক্ষেত্রে বাঙলাতে যে সন্ধিজাত ধ্বনি পাই তার সবগুলোই বাঙলার নিজস্ব রীতিতে উচ্চারিত হয়। ফলে সব সময় বাংলা সন্ধি সুনির্দিষ্ট কোন রীতিকে অনুসরণ করে না। তারপরেও কিছু কিছু সাধারণ রীতি অনুসৃত হয়, তা পর্যায়ক্রমে নিচে আলোচনা করা হলো
.১। বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি :
বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষে স্বরধ্বনিযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জনধ্বনি হলে, কখনো পূর্বপদের স্বরধ্বনি লোপ পায়
উদাহরণ : বড় + দাদা =বড়্দাদা ( লোপ)
মিশি +কালো =মিশ্কালো ( লোপ)
পেটে +ব্যথা =পেটব্যথা ( লোপ)
. বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি
বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনধ্বনি হলে এবং পরপদের আদ্য বর্ণ স্বরবর্ণ হলে, উক্ত স্বরবর্ণ অবিকৃতভাবে পূর্বপদের শেষ বর্ণে যুক্ত হয়
উদাহরণ : এক + এক =একেক
কয় + এক =কয়েক
তখন + =তখনই
মাস + এক =মাসেক
.৩। বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি , থাকলে এবং পরের বর্ণে থাকলে, জ্জ হয়
উদাহরণ : ত্ + =জ্জ নাত্ +জন =নাজ্জামাই
দ্ + =জ্জ বদ্ +জাত =বজ্জাত
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষ বর্ণটি -বর্গীয় হলে এবং পরপদে , , , থাকলে তা দ্বিত্ব হয়
উদাহরণ : চ্ + =জ্জ পাঁচ্ +জন =পাঁজ্জন>পাজ্জ্ন
চ্ + =শ্‌‌‌‌শো পাঁচ্ + =পাঁশ্শো
চ্ + =স্ পাঁচ +সের =পাঁস্সের
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি থাকলে এবং পরপদে =দ্দ এবং থাকলে চ্ছ হয়
উদাহরণ : ত্ + =দ্দ তৎ +দিন =তদ্দিন
ত্ + =চ্ছ উৎ +সন্ন =উচ্ছন্ন
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে এবং পরের বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে, সাধারণত ব্যঞ্জনবর্ণ দুটি পাশাপাশি বসে
উদাহরণ : শাক্ +ভাত =শাকভাত
সমীভবন
দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে যেমন, ‘জন্ম’ (++++)-এর’, ‘’- প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছেজম্ম  সমীভবন মূলত প্রকার-
. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি
. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি
. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দুটিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে যেমন, সত্য (সংস্কৃতসচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃতবিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি]
. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা
. হলন্ত (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলের্লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই
. -বর্গীয় ধ্বনির (, , , , ) পরে -বর্গীয় ধ্বনি (, , , , ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি
. ‘এর পরেএলে আরএর পরেএলেএর জায়গায়হয়। যেমন, পাঁচ+ = পাঁশশ, সাত+ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা
. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক
. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি

No comments

Powered by Blogger.