অর্থমূলক ভাবে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ
[কিন্তু, যেসব বিদেশি শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত হয়ে গেছে, আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে, সেগুলোও বাংলা ভাষার শব্দ; সেই শব্দগুলোও আমাদের ভাষার সম্পদ। সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার একটি সমৃদ্ধ ভাষার সবচেয়ে বড়ো লক্ষণ। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যতো বড়ো, সেই ভাষা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভাষা। আর শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির একটি প্রধান কৌশল বিদেশি শব্দ আত্মীকরণ বা গ্রহণ। আর তাই বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক কঠিনতর পরিভাষা তৈরি করা নিষ্প্রয়োজন। এবং তা সাধারণ মানুষ গ্রহণও করে না। ভাষায় তা-ই টিকে থাকে, যা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে। মানুষ কখনো বলে না, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অম্লজান গ্রহণ করি।’ বলে, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করি।’
শব্দের অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ জানার আগে শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা দরকার।
ব্যুৎপত্তিগত
অর্থ: কোন শব্দ যে শব্দ বা শব্দমূল হতে গঠিত হয়েছে তার অর্থ দিয়ে শব্দটির যে অর্থ ধারণ করার কথা, তাকে শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে। অর্থাৎ, উৎপত্তিগত ভাবে শব্দটির যে অর্থ দাঁড়ায়, তাকেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে।
যেমন, ‘মধুর’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘মধু+র’ অর্থাৎ ‘মধু’ শব্দ হতে। তাই ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ
হওয়া উচিত মধু সংশ্লিষ্ট কোন অর্থ। আর ‘মধুর’ শব্দের অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’। অর্থাৎ, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থেকেছে।
আবার, ‘হস্তী’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘হস্ত+ইন’ অর্থাৎ ‘হস্ত’ শব্দ হতে। তাই ‘হস্তী’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত হস্ত বা হাত সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ‘হস্তী’ বলতে একটি বিশেষ পশুকে বোঝায়, যার আদপে কোন হাত-ই নেই। অর্থাৎ, শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থাকেনি।
ব্যবহারিক অর্থ: কোন শব্দ প্রকৃতঅর্থে যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, বা যে অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সেই শব্দের ব্যবহারিক অর্থ বলে। যেমন, উপরের উদাহরণগুলোতে, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’, আর ‘হস্তী’র ব্যবহারিক অর্থ ‘একটি বিশেষ পশু’।
অর্থগত ভাবে শব্দসমূহকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়–
১. যৌগিক শব্দ
যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই থাকে, তাদের যৌগিক শব্দ বলে।
অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না অপরিবর্তিত থাকে,
তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন-
মূলশব্দ
|
শব্দগঠন (অর্থ)
|
অর্থ
|
গায়ক
|
গৈ+অক
|
যে গান করে
|
কর্তব্য
|
কৃ+তব্য
|
যা করা উচিত
|
বাবুয়ানা
|
বাবু+আনা
|
বাবুর ভাব
|
মধুর
|
মধু+র
|
মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত
|
দৌহিত্র
|
দুহিতা+ষ্ণ্য (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র)
|
কন্যার মতো, নাতি
|
চিকামারা
|
চিকা+মারা
|
দেওয়ালের লিখন
|
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হয়, তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন-
মূলশব্দ
|
শব্দ গঠন
|
ব্যুৎপত্তিগত অর্থ
|
ব্যবহারিক/ মূলঅর্থ
|
হস্তী
|
হস্ত+ইন
|
হাত আছে যার
|
একটি বিশেষ প্রাণী, হাতি
|
গবেষণা
|
গো+এষণা
|
গরম্ন খোঁজা
|
ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা
|
বাঁশি
|
বাঁশ+ইন
|
যাহা
বাঁশ দিয়ে তৈরি
|
বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র
|
তৈল
|
তিল+ষ্ণ্য
|
যা
তিল থেকে তৈরি সেণহ পদার্থ
|
উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন সেণহ পদার্থ
|
প্রবীণ
|
প্র+বীণা
|
প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি
|
অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি
|
সন্দেশ
|
সম+দেশ
|
সংবাদ
|
মিষ্টান্ন বিশেষ
|
৩. যোগরূঢ় শব্দ
সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন-
মূল শব্দ
|
শব্দ গঠন
|
ব্যবহারিক অর্থ
|
রাজপুত
|
রাজার পুত্র/ছেলে
|
একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি
|
পঙ্কজ
|
পঙ্কে জন্মে যা
|
পদ্মফুল
|
মহাযাত্রা
|
মহাসমারোহে যাত্রা
|
মৃত্যু
|
জলধি
|
জল ধারণ করে যা/ এমন
|
সাগর
|
৪. নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ
বিভিন্ন বিদেশি শব্দের অনুকরণে ভাবানুবাদমূলক যেসব প্রতিশব্দ তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোকে নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ বলে। মূলত প্রচলিত বিদেশি শব্দেরই এরকম পারিভাষিক শব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে।
যেমন-
পারিভাষিক শব্দ
|
মূল বিদেশিশব্দ
|
পারিভাষিক শব্দ
|
মূল বিদেশিশব্দ
|
অম্লজান
|
Oxygen
|
সচিব
|
Secretary
|
উদযান
|
Hudrogen
|
স্নাতক
|
Graduate
|
নথি
|
File
|
স্নাতকোত্তর
|
Post
Graduate
|
প্রশিক্ষণ
|
Training
|
সমাপ্তি
|
Final
|
ব্যবস্থাপক
|
Manager
|
সাময়িকী
|
Periodical
|
বেতার
|
Radio
|
সমীকরণ
|
Equation
|
মহাব্যবস্থাপক
|
General
Manager
|
[কিন্তু, যেসব বিদেশি শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত হয়ে গেছে, আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে, সেগুলোও বাংলা ভাষার শব্দ; সেই শব্দগুলোও আমাদের ভাষার সম্পদ। সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার একটি সমৃদ্ধ ভাষার সবচেয়ে বড়ো লক্ষণ। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যতো বড়ো, সেই ভাষা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভাষা। আর শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির একটি প্রধান কৌশল বিদেশি শব্দ আত্মীকরণ বা গ্রহণ। আর তাই বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক কঠিনতর পরিভাষা তৈরি করা নিষ্প্রয়োজন। এবং তা সাধারণ মানুষ গ্রহণও করে না। ভাষায় তা-ই টিকে থাকে, যা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে। মানুষ কখনো বলে না, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অম্লজান গ্রহণ করি।’ বলে, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করি।’
No comments