দ্বিরুক্ত শব্দ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

দ্বিরুক্ত শব্দ
দ্বিরুক্ত শব্দটিকে ভাঙলে পাওয়া যায়দ্বি+উক্ত অর্থ যাহা ২বার দুইবার বলা হয়েছে
বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ বা পদ দু’বার ব্যবহৃত হয়ে অন্য একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। কোন শব্দ বা পদ পরপর দু’বার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে দ্বিরুক্ত শব্দ বলে। যেমন- ‘আমার বমি বমি লাগছে।এখানেবমি বমিদ্বিরুক্ত শব্দটি ঠিকবমিঅর্থ প্রকাশ করছে না। বমি ভাব প্রকাশ
করছে
দ্বিরুক্ত শব্দ তিন প্রকার- শব্দের দ্বিরুক্তি, পদের দ্বিরুক্তি অনুকার দ্বিরুক্তি
) শব্দের দ্বিরুক্তি
. একই শব্দ অবিকৃতভাবে দুইবার ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- ভাল ভাল বই, ফোঁটা ফোঁটা জল, বড় বড় বাড়ি, ইত্যাদি।
সহচর শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। দুটি সম্পর্কিত শব্দকে সহচর শব্দ বলা যায়। যেমন, ‘কাপড়-চোপড়সহচর শব্দযোগে গঠিত দ্বিরুক্ত শব্দ।কাপড়অর্থ গা ঢাকার জন্য যেসব পরা হয়। আর কাপড়ের সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে যেগুলো পরা হয় সেগুলোইচোপড় অর্থাৎ, এই দুটি শব্দ পরস্পর সম্পর্কিত। তাই এই দুটি শব্দ সহচর শব্দ। এরকম- লালন-পালন, খোঁজ-খবর, ইত্যাদি।
. একই শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে পরেরবার একটু পরিবর্তিত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- মিট-মাট, ফিট-ফাট, বকা-ঝকা, তোড়-জোড়, গল্প-সল্প, রকম-সকম, ইত্যাদি।
. সমার্থক শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- ধন-দৌলত, বলা-কওয়া, টাকা-পয়সা, ইত্যাদি।
. বিপরীতার্থক শব্দযোগেও দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন- লেন-দেন, দেনা-পাওনা, ধনী-গরিব, আসা-যাওয়া, ইত্যাদি
) পদের দ্বিরুক্তি/ পদাত্মক দ্বিরুক্তি
পদ বা বিভক্তিযুক্ত শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে পদের দ্বিরুক্তি বা পদাত্মক দ্বিরুক্তি বলে
পদাত্মক দ্বিরুক্তি নিম্নোক্তভাবে গঠিত হতে পারে-
. একই পদ অবিকৃতভাবে পরপর দুইবার ব্যবহৃত হয়ে। যেমন- ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে। দেশে দেশে ধন্য ধন্য পড়ে গেলো। মনে মনে আমিও কথাই ভাবছিলাম।
. দ্বিতীয় পদ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে। তবে এক্ষেত্রেও পদ-বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, মূল শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন- আমরা হাতে-নাতে চোরটাকে ধরেছি।
. সহচর, সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ একই বিভক্তি যুক্ত হয়ে পরপর ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- আমার সমত্মান যেন থাকে দুধে-ভাতে। দেশে বিদেশে বইটি লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী, আর পথে-প্রবাসে লিখেছেন মুহম্মদ এনামুল হক
পদাত্মক দ্বিরুক্তির প্রয়োগ
বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি
(
উল্লেখ্য, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ পদের মত কাজ/ আচরণ করে। অর্থাৎ, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।)
. আধিক্য বোঝাতে                          : রাশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান
. সামান্য বোঝাতে                           : আমার জ্বর জ্বর লাগছে। কবি কবি ভাব।
. পরস্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে  : তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ। ওরা বাড়ি বাড়ি হেঁটে চাঁদা তুলছে।
. ক্রিয়া বিশেষণ                              : ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়।
. অনুরূপ কিছু বোঝাতে                     : তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই।
. আগ্রহ বোঝাতে                             : দাদা দাদা বলে ডাকছে
বিশেষণ পদের দ্বিরুক্তি
. আধিক্য বোঝাতে               : ভাল ভাল আম। ছোট ছোট ডাল।
. তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে : গরম গরম জিলাপী। নরম নরম হাত।
. সামান্যতা বোঝাতে            : উড়ু উড়ু ভাব। কাল কাল চেহারা
সর্বনাম পদের দ্বিরুক্তি
. বহুবচন বা আধিক্য বোঝাতে : সে সে লোক কোথায় গেল? কে কে এল? কেউ কেউ বলে
ক্রিয়াপদের/ ক্রিয়াবাচক পদের দ্বিরুক্তি
. বিশেষণ রূপে                 : রোগীর তো যায় যায় অবস্থা। তোমার নেই নেই ভাব আর গেল না।
. স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে      : দেখতে দেখতে আকাশ কাল হয়ে এল।
. ক্রিয়া বিশেষণ               : দেখে দেখে যাও। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কিভাবে?
. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে    : ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেছি
অব্যয় পদের দ্বিরুক্তি
. ভাবের গভীরতা বোঝাতে    : সবাই হায় হায় করতে লাগল। ছি ছি, তুমি এত খারাপ!
. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে      : বার বার সে কামান গর্জে উঠল।
. অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে   : ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে।
. বিশেষণ বোঝাতে              : পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির।
. ধ্বনিব্যঞ্জনা                     : ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ
সতর্কতা বোঝাতে               : ছেলেটিকে চোখে চোখে রেখো।
ভাবের প্রগাঢ়তা বোঝাতে      : ভুলগুলো তুই আনরে বাছা বাছা।
কালের বিসত্মার বোঝাতে      : থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে।
আধিক্য বোঝাতে                 : লোকটা হাড়ে হাড়ে শয়তান।
:
পরশে মুখে মুখে, খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে,  নীরবে চোখে চোখে চায়
) অনুকার দ্বিরুক্তি?

No comments

Powered by Blogger.