উৎপত্তিগত ভাবে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ
বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই পাঁচটি বিভাজন সম্পর্কে জানার পূর্বে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জানা জরুরি।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি: বাংলা ভাষার উৎপত্তি মূলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ হতে। এই বংশের অন্যতম ১টি শাখা সংস্কৃত। বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার বংশেরই উত্তরসূরী। কিন্তু বাংলা ভাষা সরাসরি সংস্কৃত ভাষা হতে আসেনি। সংস্কৃত ভাষা সবসময়েই ছিলো সমাজের সম্ভ্রান্ত মানুষদের ব্যবহৃত ভাষা। আর
বাংলা শুরু থেকেই সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষের ভাষা। এ থেকেই বোঝা যায় সংস্কৃত আর বাংলার মাঝেও কোনো ভাষা ছিলো। কিন্তু এ ব্যাপারে ভাষাবিদরা একমত হতে পারেননি। পূর্বে সম্ভ্রান্ত মানুষেরা সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করতো। আর সাধারণ মানুষ যে সব ভাষায় কথা বলতো, সেগুলোকে বলা হতো প্রাকৃত ভাষা বা অপভ্রংশ ভাষা। অপভ্রংশ মানে বিকৃত, সংস্কৃত ভাষার শব্দকে মানুষ পরিবর্তন করে তাদের সুবিধামতো করে উচ্চারণ করতো বলে পন্ডিতরা এগুলোকে বলতেন অপভ্রংশ বা বিকৃত ভাষা। এগুলো আঞ্চলিক ভাষার মতোই একেক জায়গায় ছিলো একেক রকম। ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষা এসেছে গৌড়ীয় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে। আর ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা ভাষা এসেছে মাগধী অপভ্রংশ থেকে। এই অপভ্রংশগুলোতে সংস্কৃত ভাষার যে পরিবর্তিত বা বিকৃত রূপ পাওয়া যায়, তারই আরো পরিবর্তিত আর সহজ রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয় বাংলা ভাষা। দিন দিন মানুষের ভাষা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলা ভাষাও অনেক সহজ হয়ে এসেছে। এবং তা আরো পরিবর্তিত হয়ে দিন দিন আরো সহজ ও সংক্ষিপ্ত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রয়োজনে আরো অনেক নতুন শব্দও তৈরি হবে বা অন্য ভাষা থেকে আমাদের ভাষায় ঢুকে যাবে।
শ্রেণীবিভাগ
বাংলা
ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো : তৎসম শব্দ, অর্ধ-তৎসম শব্দ, তদ্ভব শব্দ, দেশি শব্দ ও বিদেশি শব্দ।
১. তৎসম শব্দ:
সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রাকৃত বা অপভ্রংশের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়নি, বরং সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, নক্ষত্র, ধর্ম, পাত্র, ভবন, মনুষ্য,সূর্য,
অনেক তৎসম শব্দেরই অর্ধ-তৎসম ও তদ্ভব রূপও বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, মনুষ্য˃ মানুষ, সূর্য˃ সুরুয।
শুধু তৎসম শব্দেই ষ, ণ ব্যবহৃত হয়।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ:
যে সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। এগুলো সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকেই কিছুটা সহজ আকারে গৃহীত হয়েছে। সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষার মাধ্যমে বাংলায় আসেনি। যেমন, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত, গৃহিণী˂ গিন্নী, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, ।
৩. তদ্ভব শব্দ:
বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সকল শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। অর্থাৎ, যে সব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত বা অপভ্রংশে ব্যবহৃত হয়েছিলো, পরে আবার প্রাকৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, মূলত এই শব্দগুলোই বাংলা ভাষা গঠন করেছে। তাই এই শব্দগুলোকে বলা হয় খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন, সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার,
৪.দেশি শব্দ:
বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, ভীম, মুণ্ডা, ইত্যাদি। মেমন, কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা, পেট (উদর)- তামিল ভাষা।
৫. বিদেশি শব্দ:
বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে বিদেশি ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।
আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, গোসল, জান্নাত, কিয়ামত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল
আদালত, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায়
আদালত, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায়
ফারসি শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোযখ,তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, রসদ আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা
ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল
পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), হাসপাতাল (hospitai), ইস্কুল (school), বাক্স (box), বোতল (bottle)
পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), হাসপাতাল (hospitai), ইস্কুল (school), বাক্স (box), বোতল (bottle)
পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতিআলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি,
ফরাসি শব্দ : কার্তুজ,ডিপো, রেস্তোঁরা কুপন ,
ওলন্দাজ শব্দ : টেক্কা, ইস্কাপন, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম)
গুজরাটি শব্দ : হরতাল, খদ্দর,
পাঞ্জাবি শব্দ : শিখচা, হিদা,
তুর্কি শব্দ : চাকর, তোপ, চাকু, দারোগা
চিনা শব্দ : চা, লুচি, চিনি,
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : লুঙ্গি, ফুঙ্গি,
জাপানি শব্দ : হারিকিরি, রিক্সা,
ফরাসি শব্দ : কার্তুজ,ডিপো, রেস্তোঁরা কুপন ,
ওলন্দাজ শব্দ : টেক্কা, ইস্কাপন, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম)
গুজরাটি শব্দ : হরতাল, খদ্দর,
পাঞ্জাবি শব্দ : শিখচা, হিদা,
তুর্কি শব্দ : চাকর, তোপ, চাকু, দারোগা
চিনা শব্দ : চা, লুচি, চিনি,
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : লুঙ্গি, ফুঙ্গি,
জাপানি শব্দ : হারিকিরি, রিক্সা,
এছাড়াও আরও১টি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন-
রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি)
হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি)
রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি)
হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি)
হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি)
হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম)
খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি)
হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম)
খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি)
ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি)
পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা
পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা
শব্দভাণ্ডার এঁকে দেখাও
ReplyDelete