ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানাে রুটি
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানাে রুটি
ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কাছে পৃথিবীর সবকিছু তুচ্ছ। সৌন্দর্য, ভালােবাসা, অনুভূতি কোনাে কিছুর মূল্যই নেই তার কাছে। খাদ্য ছাড়া কোনাে মানুষ বা প্রাণী বাঁচতে পারে না। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক প্রয়ােজন হলাে তার খাদ্য। মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য দিনরাত কাজ করে। যদি কেউ তার ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে-কোনাে নিচু কাজ করতে সে বাধ্য হয়। যে ব্যক্তি ক্ষুধার্ত তার কাছে নীতি নৈতিকতা অর্থহীন। মানুষ ক্ষুর্ধাত থাকলে তার কাছে প্রেম, প্রীতি, ভালােবাসা কিছুই ভালাে লাগে না। যে মানুষ ক্ষুধাতুর তার মনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোনাে অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে না। পেটে ক্ষুধা থাকলে বাইরের জগতের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন ও উপহাসব্যঞ্জক মনে হয়। যার অভাব নেই, অন্নচিন্তা নেই, ঐশ্বর্য আর সচ্ছলতায় যার জীবন নির্বিঘ্ন, তার কাছে আকাশের চাঁদ, ফুল, পাখি, নদী নানা কল্পিতরূপে ফুটে ওঠে। সুখী মানুষের কাছে পৃথিবী তাই কাব্যময়। অন্যদিকে রূঢ় বাস্তবের আঘাতে যাদের জীবন বিপন্ন, দুমুঠো অন্নসংস্থানের জন্য যাদের জীবন বিপর্যস্ত, তাদের কাছে পৃথিবী অত্যন্ত কর্কশ ও কঠিন। তাই আকাশের চাঁদ দেখে তাদের মনে পড়ে না প্রিয়ার মুখচ্ছবি, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই জঠরের জ্বালায় তখন তাদের মনে পড়ে চাঁদের মতাে গােল একখানা রুটি। কেননা রুটি ক্ষুধা নিবৃত্তি করে। তাই তার রুটির ভাবনায় পদ্য রচনার মতাে স্পৃহা থাকে না। ক্ষুধা লাগলে মানুষ আত্মমর্যাদা ভুলে যায়। নির্দ্বিধায় একজনের কাছ থেকে ছিনতাই করে কিছু আহারের ব্যবস্থা করে। তাই বলা যায়, “Hunger is the best sauce.”
ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যেদিকেই তাকাবে, তার কেবল খাদ্যের কথাই মনে পড়বে। তার কাছে সবকিছুই মূল্যহীন-কেবল খাদ্য ব্যতীত।
No comments