কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ সহ লিখ
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয়
সমাসে
পরপদের
অর্থ
প্রাধান্য
পায়।
মূলত,
এই সমাসে
বিশেষণ
বা বিশেষণ
ভাবাপন্ন
পদ পূর্বপদ
ও বিশেষ্য
বা বিশেষ্য
ভাবাপন্ন
পদ পরপদ
হিসেবে
ব্যবহৃত
হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে
ঐ বিশেষ্য
বা বিশেষ্য
ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।
যেমন-
নীল যে পদ্ম
= নীলপদ্ম।
এখানে,
পূর্বপদ
‘নীল’ বিশেষণ
ও পরপদ
‘পদ্ম’
বিশেষ্য।
ব্যাসবাক্যে
‘পদ্ম’
সম্পর্কে
বলা হয়েছে
পদ্মটি
‘নীল’ রঙের।
অর্থাৎ,
‘পদ্ম’
বা পরপদের
অর্থই
এখানে
প্রধান,
পরপদ
ছাড়া
পূর্বপদের
কোন প্রয়োজনীয়তা
নেই।
তাই এটি কর্মধারয়
সমাস।
কর্মধারয়
সমাসের
কয়েকটি
বিশেষ
নিয়ম-
·
দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না।
·
দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে।
·
কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
·
পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা
·
বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান
·
পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ।
·
পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ।
·
বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।
কর্মধারয় সমাস মূলত ৪ প্রকার-
1.
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়: যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদগুলো লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন, ‘স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ’। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদ ‘রক্ষার্থে’ লোপ পেয়েছে। পূর্বপদ ‘স্মৃতি’ এখানে বিশেষণ ভাব বোঝাচ্ছে। আর ‘সৌধ’ বিশেষ্য। এটিরই অর্থ প্রধান। সুতরাং এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।
(উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’। এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।)
(উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’। এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।)
2.
উপমান কর্মধারয় সমাস: সাধারণ ধর্মবাচক পদের সঙ্গে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। অর্থাৎ, উপমান ও উপমেয় কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে, সেটিই
উপমান
কর্মধারয়।
যেমন,
তুষারের
ন্যায়
শুভ্র
= তুষারশুভ্র।
এখানে
‘তুষার’র সঙ্গে
কোন ব্যক্তি
বা বস্ত্তকে
তুলনা
করা হচ্ছে।
অর্থাৎ
এটি উপমান।
আর সাধারণ
ধর্ম
হলো ‘শুভ্র’। উপমেয়
এখানে
নেই।
সুতরাং,
এটি উপমান
কর্মধারয়
সমাস।
3.
উপমিত কর্মধারয় সমাস: উপমেয় ও উপমান পদের
যে সমাস
হয়, তাকে
উপমিত
কর্মধারয়
সমাস
বলে।
এই সমাসে
সাধারণ
ধর্ম
উল্লেখ
করা থাকে
না। অর্থাৎ,
উপমান
ও উপমিত
কর্মধারয়ের
মধ্যে
যেটিতে
সাধারণ
ধর্মবাচক
পদ থাকবে
না, সেটিই
উপমিত
কর্মধারয়
সমাস।
যেমন,
‘পুরুষ
সিংহের
ন্যায়
= পুরুষসিংহ’। এখানে
‘পুরুষ’কে ‘সিংহ’র সঙ্গে
তুলনা
করা হয়েছে।
অর্থাৎ
এখানে
‘পুরুষ’
উপমেয়
আর ‘সিংহ’
উপমান।
সাধারণ
ধর্মের
উল্লেখ
নেই।
সুতরাং,
এটি উপমিত
কর্মধারয়
সমাস।
4.
রূপক কর্মধারয় সমাস: উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এটির ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমান পদের মাঝে ‘রূপ’ শব্দটি অথবা ‘ই’ শব্দাংশটি ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘মন রূপ মাঝি = মনমাঝি’। এখানে ‘মন’ উপমেয় ও ‘মাঝি’ উপমান। কিন্তু এখানে তাদের কোন নির্দিষ্ট গুণের তুলনা করা হয়নি। মনকেই মাঝি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।
No comments