সন্ধি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ সহ লিখ
সন্ধি
পাশাপাশি
অবস্থিত
দুটি
ধ্বনির
মিলন বা সংযোগকে
সন্ধি
বলে।
অর্থাৎ,
এখানে
দুটি
ধ্বনির
মিলন
হবে, এবং সেই দুটি
ধ্বনি
পাশাপাশি
অবস্থিত
হবে।
যেমন,
‘নর + অধম = নরাধম’। এখানে
‘নর’র শেষ ধ্বনি
‘অ’ (ন+অ+র+ অ), এবং ‘অধম’র প্রথম
ধ্বনি
‘অ’। এখানে
‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত
হয়ে
‘আ’ হয়েছে।
অর্থাৎ
পাশাপাশি
অবস্থিত
দুইট
ধ্বনি
‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত
হয়ে
‘আ’ হলো।
সন্ধি
ধ্বনির
মিলন : সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস।
সন্ধির
উদ্দেশ্য : সন্ধি
মূলত
দুটো
উদ্দেশ্যকে
সামনে
রেখে
করা হয়।
সুতরাং
যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো-
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)
সন্ধি
পড়ার
জন্য স্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
তাই ধ্বনি
প্রকরণ
ও উচ্চারণ
বিধির
অন্তর্গত
তালিকাটি
এখানে
দেয়া
হলো-
নাম
|
অঘোষ
|
ঘোষ
|
নাসিক্য
|
||
অল্পপ্রাণ
|
মহাপ্রাণ
|
অল্পপ্রাণ
|
মহাপ্রাণ
|
||
ক-বর্গীয় ধ্বনি (কণ্ঠ্য ধ্বনি)
|
ক
|
খ
|
গ
|
ঘ
|
ঙ
|
চ-বর্গীয় ধ্বনি (তালব্য ধ্বনি)
|
চ
|
ছ
|
জ
|
ঝ
|
ঞ
|
ট-বর্গীয় ধ্বনি (মূর্ধন্য ধ্বনি)
|
ট
|
ঠ
|
ড
|
ঢ
|
ণ
|
ত-বর্গীয় ধ্বনি (দন্ত্য ধ্বনি)
|
ত
|
থ
|
দ
|
ধ
|
ন
|
প-বর্গীয় ধ্বনি (ওষ্ঠ্য ধ্বনি)
|
প
|
ফ
|
ব
|
ভ
|
ম
|
রূপতত্ত্বের
বিচারে
সন্ধি
হল- সম-Öধা (ধারণ
করা) +ই (কি), ভাববাচ্য।
এর সমার্থ
হলে— সংযোগ,
সংশ্লেষ,
মিলন।
পাণিনীয়
ব্যাকরণের
সূত্রে
বাংলা
ব্যাকরণে
এর প্রবেশ
ঘটেছে।
গোড়ার
দিকে
বাংলা
ব্যাকরণে
তৎসম
শব্দের
সন্ধি
প্রবেশ
করেছিল
প্রত্যক্ষভাবে
সংস্কৃত
ব্যাকরণে
অনুলিপি হিসাবে। পরে বাংলা ব্যাকরণে বাংলা সন্ধি যুক্ত হয়েছে, বাংলা উচ্চারণ ও বানান রীতি অনুসারে।
পাণিনীয়
ব্যাকরণ
মতে- পরঃ সন্নিকর্ষঃ
সংহিতা
(১।৪।১০৯)। বিদ্যাসাগরের
সমগ্র
ব্যাকরণ
কৌমুদী
(ডিসেম্বর
২০০৩)
-এর বাংলা
বর্ণনায়
বলা হয়েছে—
‘দুই বর্ণ
পরস্পর
অত্যন্ত
সন্নিহিত
হইলে
উভয়ে
মিলিত
হয়’। লক্ষ্যণীয়
বিষয়
পাণিনী
সংজ্ঞায়
যাকে
সংহিতা
বলা হয়েছে—
তাই বাংলা
ব্যাকরণে
সন্ধি।
সংস্কৃত
ব্যাকরণে
প্রত্যক্ষভাবে
সন্ধিতে
উচ্চারণের
বিষয়টি
পাওয়া
যায় না।
ডঃ মুহম্মদ
শহীদুল্লাহর
মতও পাণিনি’র অনুরূপ
(..বর্ণদ্বয়ের
মিলনকে
সন্ধি
বলে।
বাঙ্গালা
ব্যাকরণ
(মাওলা
ব্রাদ্রাস,
ফাল্গুন
১৩৪২
)। এই সন্ধির
সংজ্ঞার
ব্যাপক
পরিবর্তন
লক্ষ্য
করা যায় সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায়ের
ভাষা-প্রকাশ
বাঙ্গালা
ব্যাকরণ
(বৈশাখ
১৩৯৬)
–এ। এই ব্যাকরণে
সন্ধির
সংজ্ঞায়
বলা হয়েছে
‘দুইটি
(বা ক্বচিৎ
দুইটির
অধিক)
ধ্বনি
একই পদে, অথবা
দুইটি
বিভিন্ন
পদে, পাশাপাশি
অবস্থান
করিলে,
দ্রুত
উচ্চারণের
সময় তাহাদের
মধ্যে
আংশিক
বা পূর্ণভাবে
মিলন
হয়; কিংবা
একটির
লোপ হয়, অথবা
একটি
অপরটির
প্রভাবে
পরিবর্তিত
হয়। এইরূপ
মিলন
বা পরিবর্তনকে
সন্ধি
বলে।
সুনীতিকুমারের এই সংজ্ঞায় ধ্বনিটাই প্রধান। কিন্তু বাস্তবে এই সংজ্ঞা আমাদের কিছুটা বিভ্রান্ত করে। ধরা যাক- সন্ধির নিয়মে বলা হচ্ছে, অ +অ=আ। কিন্তু বাস্তবে অ+অ হওয়া উচিৎ অঅ। কারণ, অনন্ত কাল ধরে চেষ্টা করলেও ‘অ +অ’ কে আ ধ্বনিতে পরিণত করা যায় না। কিন্তু যখন বিশেষভাবে বলে দেওয়া হবে যে- ‘অ +অ’ যুক্ত করলে আ হবেই, তখন ধ্বনির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করে, বলতেই হবে, অ +অ=আ। এর ফলে ধ্বনিতত্ত্বে সন্ধি একটি কৃত্রিম রীতি হিসাবেই প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রকৃষ্ট বিচারে দুই বর্ণের মিলনে যখন যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, প্রাথমিকভাবে যুক্তবর্ণ বানানরীতিকে প্রকাশ করে, দ্বিতীয় পর্যায়ে যখন তা ধ্বনির দ্বারা যখন প্রকাশিত হয়, তখন সন্ধির কৃত্রিম রীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে। বানানরীতির বিষয় এখানে যুক্ত করায়- আপত্তি উঠতেই পারে। তা হলে- বিষয়টির কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। ধরা যাক একটি শব্দ ‘নবান্ন’। স্বরসন্ধির নিয়মে এর বিশ্লেষণ হবে—
নব + অন্ন =নবান্ন
নব + অন্ন =নবান্ন
প্রাথমিকভাবে
বানানরীতি
অনুসারে
বলা যেতে
পারে—
১। পূর্ব-পদের শেষ বর্ণটি যদি কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
২। এবং পরপদের প্রথম বর্ণ যদি অ বা কারচিহ্ন বর্জিত হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
৩। তবে প্রথম পদের শেষবর্ণে আকার যুক্ত হবে। যেমন—
১। পূর্ব-পদের শেষ বর্ণটি যদি কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
২। এবং পরপদের প্রথম বর্ণ যদি অ বা কারচিহ্ন বর্জিত হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
৩। তবে প্রথম পদের শেষবর্ণে আকার যুক্ত হবে। যেমন—
·
নব (শেষ বর্ণ কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনধ্বনি) + অন্ন (প্রথম বর্ণ অ) =ব (প্রথম পদের শেষবর্ণ) +আ=বআ
৪। এই আ, ব্যঞ্জনবর্ণের
সাথে
আ-কার হিসাবে
যুক্ত
হবে।
·
নব +অন্ন=নবআন্ন>নবান্ন।
এখানে
উৎপন্ন
নবান্ন
শব্দের
‘বা’ ধ্বনির
ব্যাখ্যাকে
ধ্বনির
বিশ্লেষণ
করে, যে সংজ্ঞাই
দেওয়া
হোক না কেন, তা হবে একটি
কৃত্রিম
পদ্ধতি।
লক্ষ্য
করুন,
এই বিচারে
উচ্চারণ
ত্রুটির
চেয়ে
আমরা
বানানের
শুদ্ধতাকে
প্রাধান্য
দেই বেশি।
এক্ষেত্রে
আর একটি
উদাহরণ
দেওয়া
যাক।
নমুনা-
শব্দটি
‘রবীন্দ্র’
। বাংলা
উচ্চারণরীতিতে
‘ই’ ঈকারে প্রভেদ নেই। তাই ‘রবীন্দ্র’ আর ‘রবিন্দ্র’ দুটোর উচ্চারণ হবে একই। সন্ধির নিয়মে আমরা যদি বিষয়টি পরপর লিখি, তাহলে বিশ্লেষণটা নিচের মতো হতে পারে।
·
রবি + ইন্দ্র=রবীন্দ্র (বানানরীতে শুদ্ধ, উচ্চারণরীতিতে হবে -রো.বিন্.দ্রো )
·
রবি + ইন্দ্র=রবিন্দ্র (বানানরীতে অশুদ্ধ,
উচ্চারণরীতিতে
হবে -রো.বিন্.দ্রো)
লক্ষ্য
করুন।
‘রবীন্দ্র’
ও ‘রবিন্দ্র’
দুটির
উচ্চারণ
একই।
তাই সন্ধির
সূত্র
এখানে
কোন কাজই
করছে
না। কিন্তু
বানান
রীতিতে
সন্ধির
রীতি
(ই +ই=ঈ) অপরিহার্য।
সন্ধির
সূত্রে
বাংলাতে
বানানরীতির
পাশাপাশি
ধ্বনি
তত্ত্বের
যে কৃত্রিম
রীতি
পাই, তারই
আলোকে
আমি সন্ধির
প্রথাগত
বিষয়গুলো
নিয়ে
আমি আলোচনা
করেছি।
বলাই
বাহুল্য
বাংলা
ধ্বনিতত্ত্বের
সন্ধির
সূত্রগুলো
প্রত্যক্ষ
প্রভাব
ফেলে
না বটে, কিন্তু
সন্ধিজাত
শব্দের
উচ্চরণে
কৃত্রিম
ধ্বনিরীতিকে
বিশেষ
নিয়ম
হিসাবে
মানা
যেতে
পারে।
সন্ধির
প্রকারভেদ
ধ্বনির
মিলনকে
সন্ধি
হিসাবে
বিবেচনা
করলেও
প্রথমেই
তা বিচার
করতে
হবে, মৌলিক
ধ্বনির
বিচারে।
ধ্বনির
বিচারে
প্রাথমিক
প্রধান
দুটি
ভাগ হলো- স্বরধ্বনি
ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
যদিও বাংলাতে মৌলিক স্বরধ্বনি সংখ্যা রয়েছ মাত্র সাতটি। কিন্তু প্রচলিত সন্ধির নিয়মাবলীর ভিতরে ১১টি স্বরবর্ণেরই ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই তালিকায় অবশ্যই এ্যা নামক মৌলিকধ্বনিটি নেই। কারণ এ্যা নামক কোন বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় নেই। কিন্তু সন্ধিজাত শব্দে পাওয়া যায়।
যেমন — অতি + আচার =অত্যাচার।
যদিও বাংলাতে মৌলিক স্বরধ্বনি সংখ্যা রয়েছ মাত্র সাতটি। কিন্তু প্রচলিত সন্ধির নিয়মাবলীর ভিতরে ১১টি স্বরবর্ণেরই ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই তালিকায় অবশ্যই এ্যা নামক মৌলিকধ্বনিটি নেই। কারণ এ্যা নামক কোন বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় নেই। কিন্তু সন্ধিজাত শব্দে পাওয়া যায়।
যেমন — অতি + আচার =অত্যাচার।
সংস্কৃত
তথা তৎসম
সন্ধিতে
যে নিয়মে
নূতন
শব্দ
তৈরি
হয়, অ-তৎসম
শব্দের
ক্ষেত্রে
তা খাটে
না। মূলত
এই অ-তৎসম
শব্দ
বাংলা
সন্ধি
হিসাবে
বিবেচিত
হয়ে থাকে।
এই সব বিবেচনায়
গোড়াতেই
সন্ধিকে
দুই ভাগে
ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটো
হলো-
1.
সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সন্ধি
2.
বাংলা শব্দের সন্ধি
No comments