৫. অব্যয় পদ কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কি কি?
অব্যয় শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘ন ব্যয়’, অর্থাৎ যার কোন ব্যয় নেই।
যে পদের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। অর্থাৎ, যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থাকে, যার সঙ্গে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না এবং পুরুষ বা বচন বা লিঙ্গ ভেদে যে পদের রূপের বা চেহারারও কোন পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে।
অব্যয় পদ বাক্যে কোন পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে কখনো বাক্যকে আরো শ্রচতিমধুর করে, কখনো একাধিক পদ বা বাক্যাংশ বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের অব্যয় শব্দ ব্যবহৃত হয়-
১. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হাঁ, না
২. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্ত্তত।
‘এবং’ ও ‘সুতরাং’ এই দুটি অব্যয় শব্দও তৎসম, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। তবে এ দুটি অব্যয় শব্দের অর্থ বাংলা ভাষায় এসে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সংস্কৃতে ‘এবং = এমন’ আর ‘সুতরাং = অত্যন্ত, অবশ্য’
বাংলায় ‘এবং = ও’ আর ‘সুতরাং = অতএব’
৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা
অব্যয়ের প্রকারভেদ
অব্যয় পদ মূলত ৪ প্রকার-
১. সমুচ্চয়ী অব্যয় :
যে অব্যয় পদ একাধিক পদের বা বাক্যাংশের বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। এই সম্পর্ক সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন যে কোনটিই হতে পারে। একে সম্বন্ধবাচক অব্যয়ও বলে।
সংযোজক অব্যয় : উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। (উচ্চপদ, সামাজিক মর্যাদা- দুটোই চায়)
তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। (তাই অব্যয়টি ‘তিনি সৎ’ ও ‘সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে’ বাক্য দুটির মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে।
এরকম- ও, আর, তাই, অধিকন্তু, সুতরাং, ইত্যাদি।
ক) বিয়োজক অব্যয় :
আবুল কিংবা আব্দুল এই কাজ করেছে। (আবুল, আব্দুল- এদের একজন করেছে, আরেকজন করেনি। সম্পর্কটি বিয়োগাত্মক, একজন করলে অন্যজন করেনি।)
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। (‘মন্ত্রের সাধন’ আর ‘শরীর পাতন’ বাক্যাংশ দুটির একটি সত্য হবে, অন্যটি মিথ্যা হবে।)
এরকম- কিংবা, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো, ইত্যাদি।
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। (‘মন্ত্রের সাধন’ আর ‘শরীর পাতন’ বাক্যাংশ দুটির একটি সত্য হবে, অন্যটি মিথ্যা হবে।)
এরকম- কিংবা, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো, ইত্যাদি।
খ) সংকোচক অব্যয় :
তিনি শিক্ষিত, কিন্তু অসৎ। (এখানে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অসৎ’ দুটোই সত্য, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটেনি। কারণ, বৈশিষ্ট্য দুটো একরকম নয়, বরং বিপরীতধর্মী। ফলে তিনি অসৎ বলে তিনি শিক্ষিত বাক্যাংশটির ভাবের সংকোচ ঘটেছে।)
এরকম- কিন্তু, বরং, তথাপি, যদ্যপি, ইত্যাদি।
এরকম- কিন্তু, বরং, তথাপি, যদ্যপি, ইত্যাদি।
২. অনন্বয়ী অব্যয় : যে সব অব্যয় পদ নানা ভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করে, তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এগুলো বাক্যের অন্য কোন পদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
উচ্ছ্বাস প্রকাশে
: মরি মরি! কী সুন্দর সকাল!
স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশে : হ্যা, আমি যাব। না, তুমি যাবে না।
সম্মতি প্রকাশে
: আমি আজ নিশ্চয়ই যাব।
অনুমোদন প্রকাশে : এতো করে যখন বললে, বেশ তো আমি আসবো।
সমর্থন প্রকাশে
: আপনি তো ঠিকই বলছেন।
যন্ত্রণা প্রকাশে
: উঃ! বড্ড লেগেছে।
ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে : ছি ছি, তুমি এতো খারাপ!
সম্বোধন প্রকাশে
: ওগো, তোরা আজ যাসনে ঘরের বাহিরে।
সম্ভাবনা প্রকাশে
: সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে কিছু বলে।
বাক্যালংকার হিসেবে :
কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজ মনে।
-হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা, কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা।
৩. অনুসর্গ অব্যয় :
যেসব অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির কাজ করে, এবং কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। অর্থাৎ, যেই অব্যয় অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন-
ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (এখানে ‘দিয়ে’ তৃতীয়া বিভক্তির মতো কাজ করেছে, এবং ‘ওকে’ যে কর্ম কারক, তা নির্দেশ করেছে। এই ‘দিয়ে’ হলো অনুসর্গ অব্যয়।)
[কারক ও বিভক্তি] [অনুসর্গ]
৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক
অব্যয় :
বিভিন্ন শব্দ বা প্রাণীর ডাককে অনুকরণ করে যেসব অব্যয় পদ তৈরি করা হয়েছে, তাদেরকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে।
মানুষ আদিকাল থেকেই অনুকরণ প্রিয়। তারা বিভিন্ন ধরনের শব্দ, প্রাকৃতিক শব্দ, পশুপাখির ডাক, যেগুলো তারা উচ্চারণ করতে পারে না, সেগুলোও উচ্চারণ করার চেষ্টা করেছে। এবং তা করতে গিয়ে সে সকল শব্দের কাছাকাছি কিছু শব্দ তৈরি করেছে। বাংলা ভাষার এ সকল শব্দকে বলা হয় অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়। যেমন-
·
বজ্রের ধ্বনি- কড় কড়
·
তুমুল বৃষ্টির শব্দ- ঝম ঝম
·
স্রোতের ধ্বনি- কল কল
·
বাতাসের শব্দ- শন শন
·
নূপুরের আওয়াজ- রুম ঝুম
·
সিংহের গর্জন- গর গর
·
ঘোড়ার ডাক- চিঁহি চিঁহি
·
কোকিলের ডাক- কুহু কুহু
·
চুড়ির শব্দ-টুং টাং
শুধু বিভিন্ন শব্দই না, মানুষ তাদের বিভিন্ন অনুভূতিকেও শব্দের আকারে ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি প্রকাশের জন্য তারা বিভিন্ন শব্দ তৈরি করেছে। এগুলোও অনুকার অব্যয়। যেমন-
·
ঝাঁ ঝাঁ (প্রখরতা)
·
খাঁ খাঁ (শূণ্যতা)
·
কচ কচ
·
কট কট
·
টল মল
·
ঝল মল
·
চক চক
·
ছম ছম
·
টন টন
·
খট খট
কিছু বিশেষ অব্যয়
১. অব্যয় বিশেষণ : কোন অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষণের কাজ করলে, তাকে অব্যয় বিশেষণ বলে।
·
নাম বিশেষণ : অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
·
ক্রিয়া বিশেষণ : আবার যেতে হবে।
·
বিশেষণীয় বিশেষণ : রকেট অতি দ্রচত চলে।
২. নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ : কিছু কিছু যুগ্ম অব্যয় আছে, যারা বাক্যে একসাথে ব্যবহৃত হয়, এবং তাদের একটির অর্থ আরেকটির উপর নির্ভর করে। এদের নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ বলে। যেমন- যথা-তথা, যত-তত, যখন-তখন, যেমন-তেমন, যে রূপ-সে রূপ, ইত্যাদি। উদাহরণ-
·
যত গর্জে তত বর্ষে না।
·
যেমন কর্ম তেমন ফল।
৩. ত প্রত্যয়ান্ত
বিশেষণ : ত প্রত্যয়ান্ত কিছু তৎসম অব্যয় বাংলায় ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃততে প্রত্যয়টি ছিল ‘তস্’, বাংলায় তা হয়েছে ‘ত’। যেমন- ধর্মত, দুর্ভাগ্যবশত, অন্তত, জ্ঞানত, ইত্যাদি।
nice
ReplyDelete