সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জনগণকে সুষ্ঠুভাবে রোগ নিরাময় ও অন্যান্য
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চিকিৎসা ব্যবস্থাসমূহ। রোগের কারণ, উপশম, চিকিৎসা পদ্ধতি,
ঔষধি দ্রব্যের উপাদান ও প্রস্ত্ততকৌশল, দর্শন ও ধারণাগতভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা
ব্যবস্থা ভিন্নতর হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে প্রধানত
(ক) সনাতন ও (খ) আধুনিক এ দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়।
সনাতন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা (Traditional system of healthcare) এ ধরনের চিকিৎসা ও
উপশম কৌশল উদ্ভিদ, প্রাণী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের প্রথাগত ব্যবহার ও
সাংস্কৃতিক
আচরণ, সামাজিক সংস্কার, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনেকক্ষেত্রে বর্তমান ও
পূর্ববর্তী প্রজন্মের বিভিন্ন কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO ১৯৭৬) নিম্নলিখিত উপায়ে সনাতন চিকিৎসার মৌলিক ধারণা
বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে: ‘‘সনাতন চিকিৎসা হচ্ছে লিখিত বা অলিখিতভাবে বংশ
পরম্পরায় চলে আসা একেবারেই বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে
ব্যাখ্যাসাধ্য বা ব্যাখ্যাতীত জ্ঞান ও রীতিনীতির মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক বা
সামাজিক অস্বাভাবিক অবস্থার শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও নিরাময়।’’ বর্তমানে ব্যবহূত
সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ অত্যন্ত সংগঠিত এবং দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠিত আয়ুর্বেদ
ও ইউনানি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ভেষজ, আধ্যাত্মিক, ধর্মীয় চিকিৎসার মতো লোকজ
চিকিৎসা রীতি পর্যন্ত বিস্তৃত। সুদূর অতীতে এসব চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভব এবং প্রথাগত
ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখে অধিকাংশ পদ্ধতি অতীতের মতো প্রায় একইভাবে প্রয়োগ করা হয়
বলে এদের একত্রে বলা হয় সনাতন চিকিৎসা। সনাতন চিকিৎসায় অনুসৃত মূলনীতি হচ্ছে কোন
ব্যক্তির নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রতঙ্গের চেয়ে পুরো শরীরের চিকিৎসার প্রচেষ্টা চালানো
এবং তাকে তার ভাববেগ ও বাহ্যিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা,
বিভিন্ন পশ্চিমা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ সনাতন চিকিৎসা
ব্যবস্থাকে বর্তমানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এশিয়া, আফ্রিকার অনেক দেশেই
বর্তমানে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতি স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও
চীনের মতো কিছু এশীয় দেশে বিগত কয়েক বছরে সনাতন পদ্ধতির ব্যাপক আধুনিকায়ন
হয়েছে এবং বর্তমানে আধুনিক অ্যালোপেথিক চিকিৎসার পাশাপাশি বিকল্প ও পরিপূরক
চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। বর্তমানে ঔষধ উৎপাদনের সেকেলে ও আধুনিক
উভয় ধরনের প্রযুক্তি ও কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসরণ করে সনাতন ঔষধ
সামগ্রী বিশেষ করে ইউনানি ও আয়ুর্বেদ ব্যবস্থায় ব্যবহূত ঔষধসমূহ তৈরি করা হয়।
এসব ঔষধ এখন যথাযথভাবে ক্ষুদ্র প্যাকেট, মোড়ক, এলুমিনিয়াম পাত, পাস্টিক বা ধাতব
পাত্র ও কাঁচের বোতল এ আবদ্ধ অবস্থায় ছোট ছোট টুকরো বা মোটা ও মিহি গুঁড়ো,
বিভিন্ন আকারের বড়ি, ট্যাবলেট, তরল, অর্ধঘন পদার্থ, ক্রিম বা মলম হিসেবে বিপণন
করা হয়। ঔষধের বোতল বা মোড়কের গায়ে, ব্যবহারের মাত্রা ও সংরক্ষণ বিধিসহ বিরূপ
প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত নির্দেশনা উলেখ থাকে।
বাংলাদেশে প্রচলিত সনাতন
স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিসমূহের মধ্যে রয়েছে আয়ুর্বেদিক, ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক ও
লোকজ চিকিৎসা পদ্ধতি। একটি প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে আয়ুর্বেদিক এ
উপমহাদেশে তিন হাজার বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্যবহূত হচ্ছে। ভারতবর্ষে খ্রিস্টপূর্ব
৬০০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিরাজমান আয়ুর্বেদশাস্ত্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক
ও দার্শনিক মূল্যবোধে গ্রন্থিত। আয়ুর্বেদ মানুষকে মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অনুরূপ
হিসেবে বিবেচনা করে এবং মনে করা হয় মহাবিশ্বের সকল বৈশিষ্ট্যই রয়েছে মানবদেহে
যা, মহাবিশ্বের মতোই পাঁচটি প্রধান উপাদানে গঠিত মাটি, পানি, আগুন, বায়ু ও
মহাকাশের উচ্চমার্গীয় (বায়বীয়) উপাদান। এ চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন রোগাক্রান্ত
ব্যক্তির চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেহের এসব গাঠনিক উপাদানকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা
করা হয়। আয়ুর্বেদ ব্যবস্থায় রোগ নিরাময়ের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে দেহের ভিতরে
বা বাইরে ঔষধ প্রয়োগ, ছোটখাটো ধরনের অস্ত্রোপচার ও মনঃশারীরিক চিকিৎসা। এতে
ব্যবহূত হয় বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ ঔষধ যা গুঁড়ো, অর্ধঘন, ক্বাথ, তরল ও পাতিত রূপে
সেবন করা হয়। অনেক আয়ুর্বেদ ঔষধে অজৈব রাসায়নিক দ্রব্য, খনিজ ও প্রাণিজদ্রব্য
ব্যবহূত হয়।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় মূল উপাদান
দ্রবীভূত ভেষজদ্রব্য; এলকোহলযুক্ত নির্যাস এবং দ্রবণও প্রায়ই ব্যবহূত হয়।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা সম্পর্কিত materia medica (ভেষজবিদ্যা) থেকে ৮০০০ ঔষধের
প্রস্ত্ততপ্রণালী পাওয়া যায় এবং আরও অনেকগুলি ঔষধের প্রস্ত্ততপ্রণালী কতিপয়
পরিবারের মধ্যে গোপন রয়ে গেছে।
সনাতন স্বাস্থ্যসেবায় ইউনানি
পদ্ধতির উৎপত্তি গ্রিসে, সেখানে উনান প্রদেশে এ পদ্ধতির প্রথম প্রচলন ও উন্নয়ন
ঘটে বলে একে ইউনানি পদ্ধতি বলে। এ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রথম পরিচিত করে তোলেন
গ্রিসের হাকিম ইসকালিবাস। সপ্তম শতাব্দীতে আল-রাজি, ইবনে-সিনা, আল-রশিদ এর মতো আরব
ও পারস্যের মুসলিম মনীষীদের ইউনানি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক
আবিষ্কার ও জ্ঞানচর্চার ফলেই এ ব্যবস্থায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয় এবং প্রকৃতরূপ
লাভ করে। ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে আরব চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের
পরিপ্রেক্ষিতে একে গ্রেকো-আরব ব্যবস্থাও বলা হয়। ইবনে-সিনার (৯৮০-১০৩৭
খ্রিস্টাব্দ) চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ আল-কানুন (ইউনানি ব্যবস্থার
ওপর ভিত্তি করে লেখা) ইউরোপে কয়েক শতাব্দী ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়নে
পাঠ্যপুস্তক ছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীর পর মুসলিম জ্ঞানচর্চা পিছিয়ে পড়লেও ইউনানি
চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং চিকিৎসার একটি কার্যকর ব্যবস্থা
হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
ইউনানি ব্যবস্থা অনুযায়ী
মানবদেহ গঠনকারী মূল উপাদানসমূহের মধ্যে রয়েছে চারটি পদার্থ (আগুন, বায়ু, পানি ও
মাটি), চার ধরনের শারীরিক বা মানসিক ধাত (temperament) (গরম ও শুষ্ক, গরম ও
আর্দ্র, ঠান্ডা ও শুষ্ক এবং ঠান্ডা ও আর্দ্র), চার ধরনের রস (humour) (রক্ত, কফ,
পিত্তরস ও যকৃৎরস), অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, আত্মা (vital spirit), শক্তি (powers) ও কার্যাবলি
(functions)। ইউনানি ঔষধের মধ্যে প্রধানত রয়েছে গাছগাছালি, গাছের গুঁড়ো বা
মিশ্রণ (paste) বা উদ্ভিজ্জ দ্রব্য ও তাদের নির্যাস, সংমিশ্রণ, ক্বাথ ও পাতিত
দ্রব্য। এ ধরনের ঔষধ তৈরিতে খনিজদ্রব্য, অজৈব রাসায়নিক পদার্থ ও প্রাণিজ উপাদানও
ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। অবশ্য এলকোহলে দ্রবীভূত ভেষজদ্রব্য বা সুধা (যা এলকোহলে
তৈরি) ইউনানি চিকিৎসায় ব্যবহূত হয় না।
আয়ুর্বেদ ও ইউনানি উভয় ধরনের
সনাতন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সারা দেশে ব্যাপকভাবে
ব্যবহূত। বাংলাদেশে এ দুই চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রায় ৬,০০০ নিবন্ধিত ও ১,০০০
নিবন্ধন বহির্ভূত চিকিৎসক (আয়ুর্বেদ ব্যবস্থায় কবিরাজ এবং ইউনানি ব্যবস্থায়
হেকিম) রয়েছেন। সনাতন চিকিৎসা শাস্ত্র শিক্ষাদানের জন্য বর্তমানে দেশে সরকারের
স্বীকৃত ও অর্থায়নে পরিচালিত মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে ১০টিতে ইউনানি
এবং ৫টিতে আয়ুর্বেদ শিক্ষা দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিতে রয়েছে
হাসপাতাল, যেগুলি বাইরের রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি ডিগ্রিপ্রাপ্ত
চিকিৎসকদের শিক্ষাধীন প্রশিক্ষণ (internship) দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান চার
বছরের ডিপোমা কোর্স ও ছয়মাসের শিক্ষাধীন প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এগুলিতে
প্রতিবছর ভর্তির সংখ্যা প্রায় চারশো। ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকায় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা
করা হয়। এ কলেজ পাঁচ বছরের ডিগ্রি কোর্স ও সংযুক্ত সনাতন চিকিৎসা হাসপাতালে এক
বছরের শিক্ষাধীন প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।
হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতি এ পদ্ধতির
স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরিভাবে প্রাচ্যের সনাতন ব্যবস্থা নয়, কারণ ইউরোপে স্যামুয়েল
হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩) নামে এক জার্মান অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক বিংশ শতাব্দীর
প্রথম দিকে অ্যালোপ্যাথিক ব্যবস্থা থেকে হোমিওপ্যাথির উদ্ভাবন করেন। এ ব্যবস্থায়
ঔষধসমূহ অত্যন্ত অল্প পরিমাণে ও নিম্ন মাত্রায় প্রয়োগ করা হয় এবং ধরে নেয়া হয়
যেকোন ঔষধের মাত্রা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে এর শক্তি বা প্রতিষেধক কার্যকারিতা
গাণিতিকহারে বৃদ্ধি পায়। হোমিওপ্যাথে প্রায় ১,২০০ রকমের ঔষধ রয়েছে, যার মধ্যে
৫০০-র অধিক ঔষধি উদ্ভিদ এবং কয়েকটি বিভিন্ন প্রাণী থেকে তৈরি করা হয়।
অবশিষ্টগুলি পাওয়া যায় বিশুদ্ধ রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ থেকে। উদ্ভিদ থেকে আহরিত
ঔষধ এ ব্যবস্থায় এলকোহলে দ্রবীভূত অবস্থায় ব্যবহূত হয়। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তৈরির
ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনুষঙ্গ পদার্থ (সংরক্ষক, রং, মিষ্টিজাতীয় পদার্থ, ঘ্রাণ,
প্রভৃতি) ব্যবহূত হয় না। বাংলাদেশসহ এশিয়ায় অনেক দেশে এ চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত
জনপ্রিয়।
লোকজ চিকিৎসা এক ধরনের সহজ সরল সনাতন চিকিৎসা ব্যবস্থা, যার
ম্যাধ্যমে গ্রাম্য লোকদের চিকিৎসায় ঔষধ ব্যবহূত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। এ
ধরনের চিকিৎসা লোকজনের প্রচলিত বিশ্বাস, লোকাচার বা সংস্কৃতি, এবং কখনও কখনও
বিভিন্ন কুসংস্কারের উপর নির্ভর করে এবং এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা
অনুসরণ করা হয় না। এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঔষধ হিসেবে ব্যবহূত হয় প্রধানত
উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশবিশেষ ও তাদের উৎপন্ন দ্রব্য, যা প্রয়োজনমতো অবিকৃত
অবস্থায় সেবন করা হয়। এ ধরনের চিকিৎসায় সাধারণভাবে ব্যবহূত অন্যান্য উপাদানের
মধ্যে রয়েছে: (ক) ধর্মীয় ঔষধ, যেমন কাগজে লেখা কবচ হিসেবে প্রদত্ত ধর্মীয় বইয়ের
কিছু অংশ, রোগীর মুখে বা শরীরে বা পানীয়জল বা খাবারে পবিত্র কোরআনের সুরা বা
আয়াত পড়ে ফুঁ দেওয়া, এবং (খ) আধ্যাত্মিক ঔষধ যেমন কোন রোগ বা তার প্রতিকার
সম্পর্কে জানার জন্য মানুষের মাধ্যমে কোন অদৃশ্য শক্তি বা পূর্বপুরুষের সঙ্গে
যোগাযোগ করা, কাল্পনিক অশুভ শক্তি বিতাড়নের জন্য মন্ত্র উচ্চারণসহ রোগীর ওপর
নিপীড়নমূলক আচরণ এবং এ ধরনের আরও অনেক পদ্ধতি।
লোকজ চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে আরও
রয়েছে কেটে রক্ত বের করা, হাঁড় স্থাপন, গরম ও ঠান্ডা পানিতে গোসল করানো,
ধাত্রীপেশা, ক্ষুদ্র শল্যচিকিৎসা, রোগ নিরাময়মূলক উপবাস, পানি চিকিৎসা এবং গরম
লোহা বা কোন রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা পুড়িয়ে দেওয়াসহ অগ্নিচিকিৎসা। সাধারণত
পেশাভিত্তিক কোন বিশেষজ্ঞ শ্রেণী লোকজ চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত নয়। সমাজের
বয়স্কলোক, ধর্মীয় নেতা, বেদে, এমনকি সাধারণ কেউও লোকজ চিকিৎসা প্রদান করতে পারে।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এমনকি শহরেও লোকজ চিকিৎসা ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়।
আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি বাংলাদেশ ও
বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ব্যবহূত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অত্যন্ত উন্নত ও আধুনিক
পদ্ধতি। কেবল রোগীর প্রতিকারমূলক চিকিৎসার মধ্যেই এ ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ নয় বরং
প্রতিষেধক প্রদান এবং রোগী ও তার চারপাশের সমাজের ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য
উন্নয়নের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। এ ধরনের চিকিৎসা
ব্যবস্থা পরিচালিত হয় সুশিক্ষিত ও পেশাগত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ লোকবলের মাধ্যমে।
নির্ভুল রোগ নিরূপণ ও চিকিৎসার জন্য এ ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তির সূক্ষ্ম
যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি ব্যবহূত হয়। সেবন করা হয় বিশুদ্ধ সিনথেটিক বা প্রাকৃতিক
রাসায়নিক দ্রব্য থেকে তৈরি অত্যন্ত কার্যকর ঔষধসমূহ। এ ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার
অত্যাধুনিক সূক্ষ্ম পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে
ও নিরাপদে ওপেন হার্ট সার্জারি, হূদপিন্ড স্থাপন এবং মানবদেহের অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় জনগণকে কার্যকর ও
সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে সংগঠিত ও যন্ত্রপাতিসজ্জিত হাসপাতাল ও
ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততা এবং জনবল ও অবকাঠামোর
অভাবে স্বাস্থ্যসেবার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজনমতো গ্রাম্যজনগণের কাছে এখনও
পৌঁছনো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রাপ্ত অন্য যেকোন স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির তুলনায় এ
পদ্ধতি ব্যয়বহুল। [আবদুল গনি]
No comments