85. নহে আশরাফ আছে যার শুধু বংশ পরিচয় সেই আশরাফ জীবন যাহার পূণ্য কর্মময়।

মানুষের যশ, গৌরব, সম্মান, প্রতিপত্তি সবই নির্ভর করে কর্মের ওপর, জন্মের ওপর নয়। সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থায় আশরাফ আতরাফ- দুই শ্রেণির মধ্যে সামাজিক বৈষম্য থাকলেও আধুনিক সভ্যতায় তা একেবারে অর্থহীন। বর্তমান সমাজব্যাবস্থায় বংশ পরিচয়ের ভূমিকা গৌণ। এখানে কর্মময় জীবনের অবদানই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। পদ্মফুলের সৌন্দর্যই বড়। পঙ্কে জন্মেছে বলে তাকে ছোট করে দেখার কোনো
অবকাশ নেই। মানুষের জন্মের ব্যাপারে নিজের কোনো হাত থাকে না। নিচু কুলে জন্মগ্রহণ করে জগতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নিজ মহৎ কর্মের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, ফ্রান্সের নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, ভারতের . পি. জে আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও নিজ কৃতকর্মের দ্বারা বিশ্বে আজও চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অর্থাৎ পৃথিবীতে কর্মের মাধ্যমেই মানুষের প্রকৃত বিচার হয়। নিচুকুলে জন্মগ্রহণ করে যে নিচু হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। তার কৃতকর্মই তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় বিশ্বের দরবারে। মহৎ কার্যাবলির মাধ্যমে সে সবার কাছে প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়। তার মহৎ গুণাবলীর জন্যই সে প্রশংসিত হয় যুগ যুগ ধরে। তখন তার জন্ম কোথায় হলো দেখা হয় না, তার কর্মই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বংশ গৌরব বা ধর্ম মানুষকে যথার্থ পরিচয় দিতে পারে না। তার কৃতকর্ম ভালো না হলে সকলেই তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। পৃথিবীতে এমন অনেক উদাহরণ মেলে যারা উঁচু বংশে জন্মগ্রহণ করেও বিভিন্ন পাপকর্মের কারণে সমাজে বারবার ধিকৃত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই মানুষের উচিত বংশ গৌরবের বড়াই না করে আপন কর্মের মাধ্যমে নিজেকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত করা। এতেই জীবনের সার্থকতা নিহিত
শিক্ষা: জগতে সাধু মহৎ ব্যক্তিবর্গ স্মরণীয় বরণীয় হয়েছে বংশ পরিচয়ের মধ্য দিয়ে নয় বরং পূণ্য-কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়ে। মানুষের প্রকৃত মূল্য তার বংশ পরিচয়ের মধ্য দিয়ে নয়, মহৎ কর্মই তার একমাত্র আসল পরিচয়

No comments

Powered by Blogger.