60.জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে, সে জাতির নাম মানুষ জাতি; একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত, একই রবি-শশী মোদের সাথী।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষআশরাফুল মাখলুকাতঅর্থাৎ সৃষ্টির সেরা। অন্যদিকে, বাইবেলে আছে, "God made man after His own image." প্রতিটি ধর্মেই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। স্রষ্টার সৃষ্টিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই। তিনি প্রত্যেক মানুষকেই মেধা, মনন হৃদয় এর সমন্বয়ে অনন্য সাধারণ করে সৃষ্টি করেছেন। সভ্যতার শুরু থেকে পর্যন্ত মানুষ প্রতিটি পর্যায়ে
তার এই শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে। মূলত মানবগোষ্ঠীর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আলাদা আলাদা কোনো পরিচয় নেই। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের একমাত্র পরিচয় হলো সে মানুষ। সে পৃথিবীর যেকোনো দেশের অধিবাসী হোক, যেকোনো ধর্মাবলম্বী হোক, সাদা-কালো-তামাটে যে বর্ণের হোক, ধনী-গরীব যে শ্রেণীরই হোক, নারী হোক কিংবা পুরুষ এগুলো তার প্রকৃত পরিচয় নয়। তার সত্যিকার পরিচয় হচ্ছে মানব পরিচয়। বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস তাই যথার্থই বলেছেন- “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।কিন্তু নিচু মনের অধিকারী মানুষেরা এই সত্যকে মানতে চায় না। তারা নিজেদের স্বার্থে পৃথিবীতে জাতভেদ, বর্ণবৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য প্রভৃতি কুপ্রথা তৈরি করেছে। ধরণের স্বার্থপর মানুষেরা নিজেদের অর্থ-বিত্তের দম্ভে দরিদ্র, অসহায় মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সমাজে কৃত্রিম শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করতে সচেষ্ট। সকল মানুষ একই পৃথিবী হতে উৎপন্ন খাদ্য গ্রহণ করে, একই চন্দ্র, সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে মানুষের আলাদা কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ পরিচয় নেই; মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এটিই তার সর্বশ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র পরিচয়
শিক্ষা: পৃথিবীর সকল ধর্ম-কর্ম, মত পথের ঊর্ধ্বে মানুষের স্থান। সামান্য অর্থ-সম্পদ কিংবা জাতি, ধর্ম, বর্ণের মাপকাঠিতে মানুষকে উঁচু-নিচু শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় না। সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ, যে হৃদয়ধর্মে উদার এবং মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ না রেখে মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখে

No comments

Powered by Blogger.