203. সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ, ঐশ্বর্য ভোগ উপভোগ করার জন্য সকলই মানুষের সৃষ্টি। কিন্তু অনেক মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের গুণে তাদের হৃদয় অহমিকায় পূর্ণ। তাই, এক মানুষ অন্য মানুষের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে- ঐশ্বর্যবান ব্যক্তি দীনহীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক পার্থক্যই বিভেদ সৃষ্টির কারণ। এছাড়া জাতি, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি নিয়ে নানা সংস্কারের কারণে মানুষের মধ্যে পার্থক্য থাকে। কিন্তু এই উঁচু নিচুর পার্থক্য মানুষের সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। মানুষ হয়ে ওঠে কৃত্রিম স্বার্থপর। এক মানুষ অন্য মানুষের সাথে ঝগড়া, বিবাদ, ঘৃণা বিদ্বেষে জড়িয়ে পড়ে। ফলে, মানুষের মধ্যে থেকে মানবিকতাবোধের মতো সাধারণ গুণও লোপ পায়। মানুষ হয়ে ওঠে হিংস্র। তার মধ্যে হিংসাত্মক প্রবণতা বেড়ে যায়। অভিজাত শ্রেণির কাছে সাধারণ মানুষ নিষ্পেষিত হয়। এভাবে এক সময় মানুষ নীতি আদর্শ বিবর্জিত কাজ করতেও দ্বিধা করে না। কিন্তু মানুষ ভুলে যায় জীবনের প্রয়োজনেই সবকিছুর আয়োজন করা হয়েছে। তাই কোনো কিছু জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে না। মানুষের মর্যাদা দেয়া হলে হিংসার পথ পরিহার করে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখলে সুখস্বচ্ছন্দ্য বজায় থাকবে। মানুষের মর্যাদা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। মানুষের মধ্যে ছোট বড় ভেদ থাকা অর্থহীন। মানুষকে তার স্বীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অন্যকে সম্মান করতে হবে। মানুষ যে গোত্রেরই হোক, যত দরিদ্রই হোক তাকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অমানবিকতা দূর করে মানুষের সৎ গুণাবলির উত্তরণ ঘটাতে হবে। কারণ, অন্য প্রাণী থেকে মানুষের পার্থক্য হচ্ছে তার মনুষ্যত্ববোধে। মধ্যযুগের কবি চণ্ডীদাস সবার উপরে মানুষকে স্থান দিয়েছেন। তেমনি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন, রনদা প্রসাদ সাহা আলফ্রেড, নোবেল, মাদার তেরেসা সকলেই মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। মানুষের প্রতি অনুগ্রহ, সহমর্মিতা ইত্যাদি সঙ্গতভাবেই প্রত্যাশিত। পৃথিবীর সব মানুষকে নিয়েই মানুষের প্রকৃত সত্ত্বা। সেই সত্ত্বা মানুষের সর্বমানবিক সত্ত্বা, যা জাগিয়ে তোলার মধ্যেই রয়েছে যথার্থ মানুষ হয়ে ওঠা

জ্ঞান : ধনী-নির্ধন সবাই পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এটাই কাম্য

No comments

Powered by Blogger.