২. বিশেষণ পদ কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কি কি?

যে পদ বাক্যের অন্য কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে
অর্থাৎ, বিশেষণ পদ অন্য কোন পদ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা প্রকাশ করে, বা অন্য পদকে বিশেষায়িত করে
কিছু বিশেষণ পদ : (‘একটি ফটোগ্রাফকবিতা থেকে)
 সফেদ দেয়াল
·         শান্ত ফটোগ্রাফ
·         জিজ্ঞাসু অতিথি
·         ছোট ছেলে
·         নিস্পৃহ কণ্ঠস্বর
·         তিনটি বছর (সংখ্যাবাচক বিশেষণ)
·         রুক্ষ চর
·         প্রশ্নাকুল চোখ
·         ক্ষীয়মাণ শোক
·         সহজে হয়ে গেল বলা (ক্রিয়া বিশেষণ)
প্রকারভেদ
বিশেষণ পদ প্রকার- নাম বিশেষণ ভাব বিশেষণ
. নাম বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন-
·         বিশেষ্যের বিশেষণনীল আকাশ আর সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে একটি ছোট্ট পাখি উড়ে যাচ্ছে
·         সর্বনামের বিশেষণ : সে রূপবান  গুণবান
. ভাব বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ছাড়া অন্য কোন পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। ভাব বিশেষণ প্রকার-
·         ক্রিয়া বিশেষণধীরে ধীরে বায়ু বয়। পরে এক বার এসো
·         বিশেষণের বিশেষণ (কোন বিশেষণ যদি অন্য একটি বিশেষণকেও বিশেষায়িত করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে) :
·         নাম বিশেষণের বিশেষণসামান্য একটু দুধ দাও। ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত
·         ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : রকেটি অতি দ্রুত চলে
·         অব্যয়ের বিশেষণ (অব্যয় পদ বা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষায়িত করে) : ধিক তারেশত ধিক নির্লজ্জ যে জন
·         বাক্যের বিশেষণ (কোন পদকে বিশেষায়িত না করে সম্পূর্ণ বাক্যটিকেই বিশেষায়িত করে) : দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন
[না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ :
নি-
·         এখনো দেখ নি তুমি?
·         ফুল কি ফোটে নি শাখে?
·         পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন? রাখি নি সন্ধান
·         রহে নি, সে ভুলে নি তো
না-
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?
·         রচিয়া লহ না আজও গীতি
·         ভুলিতে পারি না কোন মতে
নাই-
·         শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান
·         নাই হল, না হোক এবারে
·         করে নাই অর্ঘ্য বিরুন?]
নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয় তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন-
·         রাশি রাশি ভারা ভারা ধান (সোনার তরী)
·         লাল লাল কৃষ্ণচূড়ায় গাছ ভরে আছে
·         নববর্ষ উপলক্ষে ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে গেছে
·         এত ছোট ছোট উত্তর লিখলে হবে না

[বিশেষণবাচককী
কী-শব্দটির একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে বিশেষণ হিসেবে এর ব্যবহার
যেমন, ‘একটি ফটোগ্রাফকবিতায় :
·         এই যে আসুন, তারপর কী খবর?
·         নিজেই চমকেকী নিস্পৃহ, কেমন শীতল
·         কী সহজে হয়ে গেল বলা। (ক্রিয়াবিশেষণের বিশেষণ/ বিশেষণের বিশেষণ)]
[বিশেষণ সম্বন্ধ
·         পাথরের টুকরো
·         আমাদের গ্রামের পুকুর
·         গ্রীষ্মের পুকুর
·         শোকের নদী
·         আমার সন্তান]

বিশেষণের অতিশায়ন (degree)
বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের মধ্যে তুলনা বোঝায়, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের একরকম অতিশায়ন প্রচলিত আছে, আবার তৎসম শব্দে সংস্কৃত ভাষার অতিশায়নের নিয়মও প্রচলিত আছে
) বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের অতিশায়ন
. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মাঝে চাইতে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি (, এর) যুক্ত হয়। যেমন-
·         গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি
·         বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান
ব্যতিক্রম : কখনো কখনো প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে- কাজ করে। যেমন-
·         মাটি সোনা বাড়া। (সোনার চেয়েও বাড়া)
. বহুর মধ্যে অতিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সর্বাপেক্ষা, সবথেকে, সবচেয়ে,সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন-
·         তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান
·         পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান
. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে গেলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম অধিকতর, ইত্যাদি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন-
·         পদ্মফুল গোলাপের চাইতে বেশি সুন্দর
·         ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী
·         কমলার চাইতে পাতিলেবু অল্প ছোট
) তৎসম শব্দের অতিশায়ন
. দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষেতরযোগ হয়
বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষেতমযোগ হয়। যেমন-
·         গুরু- গুরুতর- গুরুতম
·         দীর্ঘ- দীর্ঘতর- দীর্ঘতম
[তবে কোনো বিশেষণের শেষেতরযোগ করলে সেটা যদি আবার শ্রচতিকটু হয়ে যায়, শুনতে খারাপ লাগে, তখন বিশেষণটির শেষেতরযোগ না করে বিশেষণের আগেঅধিকতরশব্দটি যোগ করা হয়। যেমন- ‘অধিকতর সুশ্রী]
. আবার, দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষেঈয়সপ্রত্যয় যুক্ত হয়
বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষেইষ্ঠপ্রত্যয় যুক্ত হয় যেমন-
·         লঘু- লঘীয়ান- লঘিষ্ঠ
·         অল্প- কনীয়ান- কনিষ্ঠ
·         বৃদ্ধ- জ্যায়ান- জ্যেষ্ঠ
·         শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ
[দুয়ের তুলনায় এই নিয়মের ব্যবহার বাংলায় হয় না। অর্থাৎ, বাংলায় লঘীয়ান, কনীয়ান, জ্যায়ান, শ্রেয়ান, ইত্যাদি শব্দগুলোর প্রচলন নেই। তবেঈয়সপ্রত্যয়যুক্ত কতোগুলো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন- ভূয়সী প্রশংসা।]

No comments

Powered by Blogger.