168. শুনহে মানুষ ভাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।

সৃষ্টিকর্তা মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে গড়েছেন। গায়ের বর্ণ সাদা-কালো কিংবা বাঙালি, ইংরেজ, চীনা, জাপানি যা কিছুই হোক না কেন মানুষের প্রকৃত পরিচয় সে মানুষ। সত্যিকার অর্থে মানুষে মানুষে কোনো জাতিভেদ নেই। একই পৃথিবীর আলো-বাতাস আর সম্পদ ভোগ করে মানুষ বেঁচে আছে। এক আদি পুরুষ থেকেই সবার সৃষ্টি। তা সত্ত্বেও স্বার্থপর মানুষ সৃষ্টি করেছে মানুষে মানুষে কৃত্রিম বিভেদ।
জগতের যত কলঙ্কময় রক্তপাত, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, তার মূলে আছে এই ভেদাভেদ। কিন্তু এই জাতিভেদ প্রথা আর ধর্মীয় সীমারেখা অতিক্রম করেও মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। দেশে দেশে যুগে যুগে নিত্য নতুন অভিযান পরিচালনা করছে। বিরূপ প্রকৃতিকে নিজেদের বশে এনেছে। গড়ে তুলেছে গ্রাম-নগর সভ্যতা। জয় করেছে পাহাড়-সাগর। পাড়ি দিয়েছে মহাকাশে, পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে চাঁদের বুকে। নিত্য নতুন আবিষ্কারের নেশায় মানুষ দশ দিগন্তে ছুটছে। বৈচিত্র্যময় মানুষের জীবন। মানুষের জন্মই হয়েছে অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর সুশোভিত করতে। মানুষ সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে সৃষ্টি করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্প, সাহিত্য। এতসব কর্মের দ্বারাই মানুষ পৃথিবীতে তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখে। অন্য কোনো প্রাণী মানুষের এই কৃতিত্বকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। শত পরিচয়ের উপরে মানুষের একটাই পরিচয়- সে মানুষ। পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে একই রক্ত। তাই মানুষের এই পরিচয়ই শ্রেষ্ঠ। এই পরিচয়েই সকল কিছুর ঊর্ধ্বে তার অবস্থান। ধনে মানে মানুষ অপরাজেয়। উর্বর পৃথিবীতে ফসল ফলিয়ে মানুষ আনে সুখ সমৃদ্ধি। এস. ওয়াজেদ আলীর ভাষায়- “আমি মুসলমান সমাজের বটে, কিন্তু তারও উপর আমি মানুষ। আমি বাঙালী বটে, কিন্তু তারও উপর আমি মানুষ।তাইতো সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই
শিক্ষা: মানুষ তার আপন বৈশিষ্ট্যে পৃথিবীর সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ। ধর্ম-বর্ণ-জাতি কখনো মানুষের পরিচয়কে নির্দিষ্ট করে দিতে পারে না। সে যে মানুষ এটাই সত্য। আর তাই সকল পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানুষই সত্য

No comments

Powered by Blogger.