54. বই পড়ার আনন্দ

ভূমিকা:
বইয়ের পৃষ্ঠায় সঞ্চিত থাকে হাজার হাজার বছরের সমুদ্র-কল্লোলবই অতীত আরবর্তমানের সংযোগ সেতুবই জ্ঞাণের আধার একটা ভালো বই বিশ্বস্ত বন্ধুর মতোযুগেযুগে মানুষ তাই বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে,বাড়িয়ে নিয়েছে নিজেদের জ্ঞাণ ওঅভিজ্ঞতার জগৎপুস্তকপাঠ মানুষের মনের ভেতর আনন্দময় ভূবন তৈরি করতে পারেসেই আনন্দময় ভূবনে ডুব দিয়ে সংসারে নানা জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া
দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের এই উক্তি উপলব্ধি অত্যন্ত খাঁটি
বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা:
বই পড়ার মাধ্যমে আমরা সত্য,সুন্দর,ন্যায়ের শ্বাশ্বত রুপের সাথে পরিচিত হই।একঘন্টার বই পড়া আমাদের ভ্রমন করিয়ে আনতে পারে বিশ্বজগৎ।চোখের সামনেউদঘাটিত করে দিতে পারে মহাকাশের অজানা রহস্য বই পড়া আমাদের মনের প্রসারঘটায়।নির্মল আনন্দ লাভের উৎস হিসেবে বিকল্প কিছু নেই।পারস্যের কবি অমর খৈয়ামবলেনছেন ‘রুটি মদ ঢুরিয়ে যাবে ,প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যা
বে,কিন্তু বইখানাঅনন্ত যৌবনা,যদি তেমন বই হয়।,
কবি অমর খৈয়াম তাই মৃত্যুর পরেও স্বর্গে গিয়ে যাতে তার পাশে একটি বই থাকে,সেইআখাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি।পৃথিবীর বিপুলবৈচিত্র্যের দিকে তাকালে আমাদের মনে অদম্য কৌতুহল আর অনন্ত জিজ্ঞাসার উদ্রেকহয়। জীবন  জগতের সান্নিধ্যে এসে মানুষ যে বিপুল জ্ঞান সঞ্চয় করেছে,তা বিধৃতরয়েছে বইয়ের কালো অক্ষরে।সাহিত্যদর্শন,ইতিহাস,বিজ্ঞাণ,মানবজাতির অগ্রগতিরইতিহাস সভ্যতা  সংস্কৃতি ইত্যাদি হৃদয়ে ধারণ করতে হলে আমাদের বইয়ের কাছেযেতে হবে।মননশক্তি অর্জন আর হৃদয়শক্তি বিস্তার করতে হলেও প্রয়োজন বইপড়া।
বইপড়া আনন্দের সেরা উৎসবঃ বিনোদনের হাজার মাধ্যম আছে পৃথিবীতে কিন্তু সেইবিনোদন অনেক সময় নির্মল হয় না  ভলো বইয়ের সান্নিধ্য মানুষের অশান্ত মনে এনেদিতে পারে স্বর্গীয় সুখহৃদয়ে বইকে দিতে পারে আনন্দের বন্য। প্রিয় কোনো কবিরঅমর কাব্যের রসময় পঙক্তি অমৃতসুধার মতো লাগে অবসর কোনো মুহূর্তে।অবসর আরঅবকাশের সময়গুলো আমরা ভরিয়ে তুলতে পারি বই পড়ার আনন্দে।
বই পড়ার আনন্দকে আমরা রাজপ্রাসাদের সঙ্গে তুলনা করতে পারি।ধরা যাক আমিকোন রাজপ্রসাদে প্রবেশ করব।যেখানে আমার জন্য স্তরে স্তরে সাজানো প্রিয় ফুলেরলাবণ্য আছে।সুস্বর পাখিরা ডাকছে মধুর কন্ঠে।রয়েছে ঈপ্সিত ঝরনার চঞ্চলতা।চন্দনসুগন্ধি ছড়িয়ে আছে চারিদিকে।রাজপ্রাসাদের এক এক কক্ষে এক-একরকম আয়োজনপ্রবেশ করলেই সৌন্দর্যস্রোতে অবগাহন করা যায়।বস্তুত একটি ভালো বইসুসজ্জিত,আনন্দময় রাজপ্রাসাদের মতোই।জ্ঞানান্বেষী পাঠক হলেই তো কথাই নেই,আনন্দআর জ্ঞানার্জনপৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুটি কাজ একই সঙ্গে করতে পারবে সে।বিলাসীপাঠক,অসতর্ক পাঠক, রকম নানা ধরনের পাঠক আছে।আবার কেউ  বই পড়েপরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য,কেউ অস্থায়ী চাকরি স্থায়ী করতে,কেউ বা উচ্চতরপদ বা বেতনের লোভে,কেউ জ্ঞানার্জনের জন্য পড়ে বই।এসব পড়া কাজেরপড়া,আনন্দের পড়া নয়।আমার মতে যারা আনন্দের জন্য পড়ে ,তারাই শ্রেষ্ঠ পাঠক।কারন ,পৃথিবীতে অনুপম শ্রেষ্ঠ আনন্দ কেবল বইপাঠেই পাওয়া যায়।
উপসংহারঃ
বইয়ের পাতার কালো অক্ষরে অমর হয়ে আছে মানুষের চিরন্তন আত্মার দ্যুতি বই পড়ামানুষের মনে সঞ্চার করে অনাবিল আনন্দ।মনকে সতেজ  দৃষ্টিকে প্রসারিত করে বই।ফরাসি দার্শনিক আনাতোল ফ্রাঁস বলেছেন,বইপড়ার মাধ্যমে আমরা মাছির মতো মাথারচারদিকে অজস্র চোখ ফুটিয়ে তুলতে পারি।সেই চক্ষুপুঞ্জ দিয়ে একসাথে পৃথিবীর অনেককিছু নিতে পারি।
বই পড়ায় যে কত আনন্দ তা গ্রন্থপিপাসু মানুষ মাত্রই জানেন।সেই আনন্দের স্পর্স যিনিএকবার পেয়েছেন,তাঁর অন্তর হয়েছে ঐশ্বরর্যময়,হয়েছে আলোকিত।সৌন্দর্যময় জগতেঅবগাহনের শক্তি আছে একমাত্র তাঁরই তিনি কেবল গাইতে পারেন।
আলো আমার আলো ওগোআলোয় ভুবন ভরা,

No comments

Powered by Blogger.