33. খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার
প্রারম্ভিকা:
“ভেজাল, ভেজাল, ভেজাল রে ভাই
ভেজাল সারা দেশটায়
ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিস মিলবে নাকি চেষ্টায়!
খাঁটি জিনিস এই কথাটা রেখো না আর চিত্তে
ভেজাল নামটা খাঁটি কেবল, আর সকলই মিথ্যে।”
সাম্যবাদী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের অমিল খুঁজে পাওয়া ভার। এখন নাগরিক জীবনের অন্যতম উদ্বেগের নাম ‘ভেজাল’। রসাল ফল, সুস্বাদু মাছ অথবা মজাদার খাবার এখন মানুষের মৃত্যৃর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সীমাহীন মুনাফা অর্জন করার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশাচ্ছে।
ভেজাল কী: অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য খাদ্যের সাথে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য, নিন্মমানের খাদ্যসহ যেকোনো ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মেশানোই ভেজাল। মাছ থেকে মাংস, দেশীয় ফল থেকে আমদানিকৃত ফল, শাক-সবজি, জ্যাম-জেলি-আচার সব জিনিসেই ভেজাল রয়েছে। শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্যপণ্যেই এই ভেজালের ছড়াছড়ি। যেমন- মুড়ির রঙ অধিক সাদা করতে ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া। পচন থেকে রক্ষা করতে মাছে দেওয়া হয় ফরমালিন, দুধে মেশানো হয় মেলামিন। দীর্ঘক্ষণ সজীব ও আকর্ষণীয় রাখতে মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয় রঙবর্ধক কেমিক্যাল। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় ফল পাকাতে ও পচন রোধ করতে।
বাংলাদেশে ভেজালের বর্তমান পরিস্থিতি: এখন এদেশে আম, কলাসহ অন্যান্য ফল দ্রুত পাঁকানো ও আকর্ষণীয় রঙের জন্য কার্বাইড এবং পচন রোধে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মৃতমাছ ও দুধেও ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। শুটকি মাছে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর ডিডিটি। শাক-সবজিতেও ফরমালিন ও কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ মচমচে রাখার জন্য জিলাপি ও চানাচুর তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে পোড়া মবিল। আকর্ষণীয় করার জন্য কাপড় ও
চামড়ায় ব্যবহৃত রং ব্যবহার করা হচ্ছে আইসক্রিম, বিস্কুট, সেমাই, নুডলস ফলের জুস এমনকি মিষ্টি তৈরিতে। আজকাল লবণেও ভেজাল হিসেবে মেশানো হচ্ছে বালি, বিভিন্ন ধরণের মসলার সাথে মেশানো হচ্ছে ভুসি, কাঠের গুড়া, বালি বা ইটের গুড়া। কমলা ও মাল্টার স্বাদ পরিবর্তন হয়েছে রাসায়নিক পদার্থের কারণে। নকল, ভেজাল, বিষাক্ত ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। সরিষার তেলে ঝাঁজ বাড়ানোর ব্যবহার করা হয় এক ধরণের কেমিক্যাল। মুরগির খাবারে ট্যানারির বর্জ্য, ভয়ঙ্কর বিষাক্ত রাসায়নিক যুক্ত চামড়ার ভুসি ব্যবহার করা হচ্ছে এতে মুরগির মাংস ও ডিম বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হোটেলগুলোতে তরকারির রঙ আকর্ষণীয় করতে জর্দার রং ও বিভিন্ন রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হচ্ছে। মরা মুরগি রান্না করা হচ্ছে। দুর্গন্ধ রোধে মরা মুরগির মাংস রান্না করার সময় লেবুর রস ব্যবহার করা হচ্ছে। শরবত, ঠান্ডা পানি ও লাচ্ছিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাছে ব্যবহৃত বরফ।
ভেজালের ক্ষতিকর প্রভাব: খাদ্য ভেজালিকরণ উপাদানগুলো মানবদেহের নানা ক্ষতির কারণ। বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত খাবার ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। মাছ, মাংস, ফল এবং দুধে ফরমালিন প্রয়োগের ফলে ক্যান্সার, হাঁপানি এবং চর্মরোগ হয়। শিশু ও গর্ভবতী মায়ের জন্য এর ক্ষতিকর প্রভাব মারাত্মক। অতি অল্প পরিমাণ ফরমালডিহাইড গ্যাস ব্যবহারও ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়ার সংক্রমণের কারণ। ফরমালিন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা গ্রহণের ফলে মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে।বাংলাদেশ ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালকের মতে, মানবদেহে নানা ধরণের ক্যান্সার হয়ে থাকে। যেগুলোর অধিকংশই কারণ জানা যায়নি। তবে ফরমালিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক যে ক্যান্সারের বিস্তারে সক্ষম তা প্রমাণিত। এর ফলে পাকস্থলীতে প্রদাহ, লিভারের ক্ষতি, অস্তি-মজ্জা জমে যায়। ভোক্তা অধিকার সংগঠন বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটির দেয়া তথ্য মতে, ভেজাল খাদ্য খেয়ে দেশে প্রতি বছর তিন লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রায় দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিস ও ২ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কার্বাইডের কারণে তীব্র মাথা ব্যাথা, ঘূর্ণি রোগ, প্রলাপ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটা মেজাজ খিটখিটে এবং স্মরণশক্তি ক্ষতি করতে পারে। ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ফলে কিডনি, লিভার, ত্বক, মূত্রথলি এবং ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে।
ভেজাল কার্যে যারা জড়িত: চাষী বা উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ মহল পর্যন্ত সবাই ভেজালে জড়িত। বড় বড় অসৎ ব্যবসায়ীরা দ্রব্যে ভেজাল মিশিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। তারা উচ্চ মহলে ঘুষ দিয়ে সরকারি বিভিন্ন তদারকি কর্তৃপক্ষের মুখ বন্ধ রাখছে।
ভেজাল বিরোধী আইনসমূহ: ভেজাল প্রতিরোধে বাংলাদেশে আইনের অভাব নেই। কিন্তু আইনগুলোর অধীনে সামান্য কিছু জরিমানা ও দু-এক মাসের কারাদন্ড ছাড়া বড় কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। ভেজাল পণ্য উৎপাদন রোধে বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তির বিধান আছে। এ আইন করা হয় ২০০৫ সালে। এর আগে একই নামে একটি অধ্যাদেশ ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এ আইনে এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়নি। এছাড়া খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক মেশানো নিয়ে দ- বিধি ১৮৬০, বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯, বিশুদ্ধ খাদ্য নীতিমালা ১৯৬৭, বিশুদ্ধ খাদ্য আইন (সংশোধিত) ২০০৫, ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ ২০০৯, পয়জনস অ্যাক্ট ১৯১৯, ভোক্ত অধিকার আইন ২০০৯ সহ আরো অনেক আইন রয়েছে।
রাসায়নিক আমদানিকারক: প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ফরমালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করা হয়। কিন্তু সেগুলো কোথায় বিক্রি করা হয় তার সুষ্ঠু হিসাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। এসব রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। আর সেগুলো প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যে। কিন্তু আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
ভেজাল সমস্যার প্রতিকার: ভেজাল প্রতিরোধে নিন্মোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়-
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা: বাংলাদেশে ভেজাল দূর করতে হলে প্রথমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪’ এর ২৫ (গ) ধারায় খাদ্যে ভেজালের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। অব্যবহৃত আইন ব্যবহার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আইনের প্রয়োগ: বাংলাদেশে ভেজাল প্রতিরোধে বহু আইন আছে। কিন্তু আইনে তেমন প্রয়োগ নেই। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যদি শাস্তি নিশ্চিত করা হয় তাহলে ভেজাল রোধ করা সম্ভব হবে।
“ভেজাল, ভেজাল, ভেজাল রে ভাই
ভেজাল সারা দেশটায়
ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিস মিলবে নাকি চেষ্টায়!
খাঁটি জিনিস এই কথাটা রেখো না আর চিত্তে
ভেজাল নামটা খাঁটি কেবল, আর সকলই মিথ্যে।”
সাম্যবাদী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের অমিল খুঁজে পাওয়া ভার। এখন নাগরিক জীবনের অন্যতম উদ্বেগের নাম ‘ভেজাল’। রসাল ফল, সুস্বাদু মাছ অথবা মজাদার খাবার এখন মানুষের মৃত্যৃর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সীমাহীন মুনাফা অর্জন করার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশাচ্ছে।
ভেজাল কী: অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য খাদ্যের সাথে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য, নিন্মমানের খাদ্যসহ যেকোনো ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মেশানোই ভেজাল। মাছ থেকে মাংস, দেশীয় ফল থেকে আমদানিকৃত ফল, শাক-সবজি, জ্যাম-জেলি-আচার সব জিনিসেই ভেজাল রয়েছে। শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্যপণ্যেই এই ভেজালের ছড়াছড়ি। যেমন- মুড়ির রঙ অধিক সাদা করতে ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া। পচন থেকে রক্ষা করতে মাছে দেওয়া হয় ফরমালিন, দুধে মেশানো হয় মেলামিন। দীর্ঘক্ষণ সজীব ও আকর্ষণীয় রাখতে মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয় রঙবর্ধক কেমিক্যাল। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় ফল পাকাতে ও পচন রোধ করতে।
বাংলাদেশে ভেজালের বর্তমান পরিস্থিতি: এখন এদেশে আম, কলাসহ অন্যান্য ফল দ্রুত পাঁকানো ও আকর্ষণীয় রঙের জন্য কার্বাইড এবং পচন রোধে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মৃতমাছ ও দুধেও ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। শুটকি মাছে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর ডিডিটি। শাক-সবজিতেও ফরমালিন ও কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ মচমচে রাখার জন্য জিলাপি ও চানাচুর তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে পোড়া মবিল। আকর্ষণীয় করার জন্য কাপড় ও
চামড়ায় ব্যবহৃত রং ব্যবহার করা হচ্ছে আইসক্রিম, বিস্কুট, সেমাই, নুডলস ফলের জুস এমনকি মিষ্টি তৈরিতে। আজকাল লবণেও ভেজাল হিসেবে মেশানো হচ্ছে বালি, বিভিন্ন ধরণের মসলার সাথে মেশানো হচ্ছে ভুসি, কাঠের গুড়া, বালি বা ইটের গুড়া। কমলা ও মাল্টার স্বাদ পরিবর্তন হয়েছে রাসায়নিক পদার্থের কারণে। নকল, ভেজাল, বিষাক্ত ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। সরিষার তেলে ঝাঁজ বাড়ানোর ব্যবহার করা হয় এক ধরণের কেমিক্যাল। মুরগির খাবারে ট্যানারির বর্জ্য, ভয়ঙ্কর বিষাক্ত রাসায়নিক যুক্ত চামড়ার ভুসি ব্যবহার করা হচ্ছে এতে মুরগির মাংস ও ডিম বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হোটেলগুলোতে তরকারির রঙ আকর্ষণীয় করতে জর্দার রং ও বিভিন্ন রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হচ্ছে। মরা মুরগি রান্না করা হচ্ছে। দুর্গন্ধ রোধে মরা মুরগির মাংস রান্না করার সময় লেবুর রস ব্যবহার করা হচ্ছে। শরবত, ঠান্ডা পানি ও লাচ্ছিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাছে ব্যবহৃত বরফ।
ভেজালের ক্ষতিকর প্রভাব: খাদ্য ভেজালিকরণ উপাদানগুলো মানবদেহের নানা ক্ষতির কারণ। বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত খাবার ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। মাছ, মাংস, ফল এবং দুধে ফরমালিন প্রয়োগের ফলে ক্যান্সার, হাঁপানি এবং চর্মরোগ হয়। শিশু ও গর্ভবতী মায়ের জন্য এর ক্ষতিকর প্রভাব মারাত্মক। অতি অল্প পরিমাণ ফরমালডিহাইড গ্যাস ব্যবহারও ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়ার সংক্রমণের কারণ। ফরমালিন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা গ্রহণের ফলে মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে।বাংলাদেশ ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালকের মতে, মানবদেহে নানা ধরণের ক্যান্সার হয়ে থাকে। যেগুলোর অধিকংশই কারণ জানা যায়নি। তবে ফরমালিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক যে ক্যান্সারের বিস্তারে সক্ষম তা প্রমাণিত। এর ফলে পাকস্থলীতে প্রদাহ, লিভারের ক্ষতি, অস্তি-মজ্জা জমে যায়। ভোক্তা অধিকার সংগঠন বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটির দেয়া তথ্য মতে, ভেজাল খাদ্য খেয়ে দেশে প্রতি বছর তিন লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রায় দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিস ও ২ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কার্বাইডের কারণে তীব্র মাথা ব্যাথা, ঘূর্ণি রোগ, প্রলাপ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটা মেজাজ খিটখিটে এবং স্মরণশক্তি ক্ষতি করতে পারে। ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ফলে কিডনি, লিভার, ত্বক, মূত্রথলি এবং ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে।
ভেজাল কার্যে যারা জড়িত: চাষী বা উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ মহল পর্যন্ত সবাই ভেজালে জড়িত। বড় বড় অসৎ ব্যবসায়ীরা দ্রব্যে ভেজাল মিশিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। তারা উচ্চ মহলে ঘুষ দিয়ে সরকারি বিভিন্ন তদারকি কর্তৃপক্ষের মুখ বন্ধ রাখছে।
ভেজাল বিরোধী আইনসমূহ: ভেজাল প্রতিরোধে বাংলাদেশে আইনের অভাব নেই। কিন্তু আইনগুলোর অধীনে সামান্য কিছু জরিমানা ও দু-এক মাসের কারাদন্ড ছাড়া বড় কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। ভেজাল পণ্য উৎপাদন রোধে বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তির বিধান আছে। এ আইন করা হয় ২০০৫ সালে। এর আগে একই নামে একটি অধ্যাদেশ ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এ আইনে এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়নি। এছাড়া খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক মেশানো নিয়ে দ- বিধি ১৮৬০, বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯, বিশুদ্ধ খাদ্য নীতিমালা ১৯৬৭, বিশুদ্ধ খাদ্য আইন (সংশোধিত) ২০০৫, ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ ২০০৯, পয়জনস অ্যাক্ট ১৯১৯, ভোক্ত অধিকার আইন ২০০৯ সহ আরো অনেক আইন রয়েছে।
রাসায়নিক আমদানিকারক: প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ফরমালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করা হয়। কিন্তু সেগুলো কোথায় বিক্রি করা হয় তার সুষ্ঠু হিসাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। এসব রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। আর সেগুলো প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যে। কিন্তু আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
ভেজাল সমস্যার প্রতিকার: ভেজাল প্রতিরোধে নিন্মোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়-
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা: বাংলাদেশে ভেজাল দূর করতে হলে প্রথমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪’ এর ২৫ (গ) ধারায় খাদ্যে ভেজালের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। অব্যবহৃত আইন ব্যবহার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আইনের প্রয়োগ: বাংলাদেশে ভেজাল প্রতিরোধে বহু আইন আছে। কিন্তু আইনে তেমন প্রয়োগ নেই। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যদি শাস্তি নিশ্চিত করা হয় তাহলে ভেজাল রোধ করা সম্ভব হবে।
রাসায়নিক আমদানির ওপর নজরদারি: সরকারের নীতি নির্ধারণী ফোরামে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক আমদানির উপর পর্যাপ্ত নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে আমদানিকৃত রাসায়নিকের ব্যবহার যাতে সীমিত থাকে সেজন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে।
ভোক্তা আন্দোলন জোরদার:ভারতে ভোক্তা আন্দোলন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শক্ত। সেখানে পণ্যে ভেজাল প্রমাণিত হলে ভোক্তা অধিকার কর্মীরা এগিয়ে আসেন। ওই পণ্য বা সেবা বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। ফল পাওয়া যায় দ্রুতই। কিন্তু বাংলাদেশে এমন আন্দোলন শুধুই স্বপ্ন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরদার করতে হবে। ভেজালবিরোধীদের সামান্য জরিমানা করলে কাজ হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএসটিআই (BSTI) এর ভূমিকা: বিএসটিআই (Bangladesh standard and Testing Isntitution)কর্তৃপক্ষের উচিত পণ্যের মান নিশ্চিত করে অনুমোদন দেওয়া। তাছাড়া বিএসটিআইএর কর্তৃপক্ষের কেউ দুর্নীতিগ্রস্থ হলে তার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সরকারি পর্যায়ে আরও কিছু করণীয়-
ক. দেশের বিদ্যমান আইনগুলোকে যুগোপযোগী ও আরো কঠিন শাস্তির বিধান এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
খ. খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা কঠোর করা।
গ. উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্যের পৌঁছানোকে ক্রমাগত পরিদর্শনের আওতায় আনা।
ঘ. বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করা।
ব্যবসায়ীদের করণীয়-
ক. অসৎ খাদ্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
খ. অসাধু ব্যবসায়ীদের পক্ষে সমগ্র ব্যবসায়ী সমাজের এক হয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে।
ভোক্তা পর্যায়ে করণীয়-
ক. ভোক্তাদেরকে সংগঠিত হয়ে খাদ্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
খ. ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
গ. ভেজালযুক্ত খাদ্যদ্রব্য বয়কট করতে হবে।
উপসংহার: সন্দেহাতীতভাবে খাদ্যে ভেজাল একটি জাতীয় সমস্যা, জাতীয় বিপর্যয় এটা আমাদের সবাইকে বিশেষ করে নীতিনির্ধারকদেরকে সর্বাগ্রে সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে হবে। মনে রাখতে হবে-“Medicine is not healthcare rather than sick care, Food is healthcare.” কাজেই সুস্থ থাকার জন্য ভেজালমুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। কিছু অসৎ ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার্থে সমাজকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ভেজাল খাদ্য জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে পঙ্গুত্বের দিকে। দেশ ও জাতির সত্যিকার অর্থে উন্নতি চাইলে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ভেজাল মুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
ভোক্তা আন্দোলন জোরদার:ভারতে ভোক্তা আন্দোলন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শক্ত। সেখানে পণ্যে ভেজাল প্রমাণিত হলে ভোক্তা অধিকার কর্মীরা এগিয়ে আসেন। ওই পণ্য বা সেবা বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। ফল পাওয়া যায় দ্রুতই। কিন্তু বাংলাদেশে এমন আন্দোলন শুধুই স্বপ্ন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরদার করতে হবে। ভেজালবিরোধীদের সামান্য জরিমানা করলে কাজ হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএসটিআই (BSTI) এর ভূমিকা: বিএসটিআই (Bangladesh standard and Testing Isntitution)কর্তৃপক্ষের উচিত পণ্যের মান নিশ্চিত করে অনুমোদন দেওয়া। তাছাড়া বিএসটিআইএর কর্তৃপক্ষের কেউ দুর্নীতিগ্রস্থ হলে তার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সরকারি পর্যায়ে আরও কিছু করণীয়-
ক. দেশের বিদ্যমান আইনগুলোকে যুগোপযোগী ও আরো কঠিন শাস্তির বিধান এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
খ. খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা কঠোর করা।
গ. উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্যের পৌঁছানোকে ক্রমাগত পরিদর্শনের আওতায় আনা।
ঘ. বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করা।
ব্যবসায়ীদের করণীয়-
ক. অসৎ খাদ্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
খ. অসাধু ব্যবসায়ীদের পক্ষে সমগ্র ব্যবসায়ী সমাজের এক হয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে।
ভোক্তা পর্যায়ে করণীয়-
ক. ভোক্তাদেরকে সংগঠিত হয়ে খাদ্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
খ. ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
গ. ভেজালযুক্ত খাদ্যদ্রব্য বয়কট করতে হবে।
উপসংহার: সন্দেহাতীতভাবে খাদ্যে ভেজাল একটি জাতীয় সমস্যা, জাতীয় বিপর্যয় এটা আমাদের সবাইকে বিশেষ করে নীতিনির্ধারকদেরকে সর্বাগ্রে সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে হবে। মনে রাখতে হবে-“Medicine is not healthcare rather than sick care, Food is healthcare.” কাজেই সুস্থ থাকার জন্য ভেজালমুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। কিছু অসৎ ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার্থে সমাজকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ভেজাল খাদ্য জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে পঙ্গুত্বের দিকে। দেশ ও জাতির সত্যিকার অর্থে উন্নতি চাইলে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ভেজাল মুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
No comments