৫. অপাদান কারক কাকে বলে? উদাহরণ সহ লিখ

যা থেকে কোন কিছু গৃহীত, বিচ্যুত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, রক্ষিত, ভীত হয়, তাকে অপাদান কারক বলে
অর্থাৎ, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হওয়া বোঝায়
কি হতে বের হলপ্রশ্নের উত্তরই অপাদান কারক
উদাহরণ-
·        গাছ থেকে পাতা পড়ে। (কি হতে বের হল/ পড়ল? গাছ থেকে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
·         শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে। (কি হতে বের হল? শুক্তি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
·         জমি থেকে ফসল পাই। (কি হতে বের হল? জমি থেকে)   : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
·         দেশ থেকে হায়েনারা চলে গেছে। (কি হতে বের হল? দেশ থেকে):অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
·         বিপদ থেকে বাঁচাও। (কি হতে বাঁচাও? বিপদ হতে)         : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
·         বাঘকে ভয় পায় না কে? (কি হতে ভয় বের হল? বাঘ হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
·         মনে পড়ে সেই জৈষ্ঠ্যের দুপুরে পাঠশালা পলায়ন। (কি হতে বের হল/ পলায়ন? পাঠশালা হতে) : অপাদান কারকে শূণ্য বিভক্তি
·         বাবাকে বড্ড ভয় পাই। (কি হতে ভয় বের হয়? বাবা হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
·         তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। (কি হতে বের হয়েছেন/ এসেছেন? চট্টগ্রাম হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
·         বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছিলো। (কি হতে বের হল/ ফেলা হল? বিমান হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণের কারক-এর একটি শ্রেণি। বাংলা ব্যাকরণে অপাদান কারক এসেছে পাণিনি অষ্টাধ্যায়ী অনুসরণে। পাণিনির মতে-
ধ্রুবমপায়েহপাদানাম্
অপায়ে যদুদার্সীনং চলং বা যদি বাচলম্।
ধ্রুবমেবাতদাবেশাৎ তদপাদানমুচ্যতে॥
বিদ্যাসাগর এর সংজ্ঞা দিয়েছেন- ‘যাহা হইতে বিশ্লেষ হয়, তাহাকে অপাদান কারক বলে
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁরভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা-ব্যাকরণগ্রন্থে এই কারকের সংজ্ঞা দিয়েছেন– ‘যাহা হইতে কোনও বস্তু বা ব্যক্তি উৎপন্ন, চলিত, নির্গত, নিঃসৃত, উত্থিত, পতিত, প্রেরিত, গৃহীত, দৃষ্ট, শ্রুত, সূচিত, নিবারিত, অন্তর্হিত, রক্ষিত ইত্যাদি হয়তাহাকে অপাদান-কারক বলে।
সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের সংজ্ঞাটিই বাংলা ব্যাকরণে প্রমিত সংজ্ঞা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই কারক নির্ণয়ের সূত্র হলো- বাক্যানুসারেকি থেকেবাকিসের থেকেপ্রশ্ন সাপক্ষে যদি উত্তর পাওয়া যায়, তবে তা অপাদান কারক হিসাবে বিবেচিত হবে
ছাদ থেকে পানি পড়ছে। পুকুর থেকে ফিরে এলাম। ইত্যাদি
এই কারকের জন্য সাধারণত হইতে>হতে, থেকে, চাহিয়া>চেয়ে বিভক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাকরণ এগুলোকে কারক-বিভক্তির তালিকায় পঞ্চমী বিভক্তি বলা হয়। এই বিভক্তিগুলো শব্দের সাথে যুক্ত অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। তাই এগুলোর মান দাঁড়ায় অনুসর্গের মতো। যেমন-
ছাদ থেকে পানি পড়ছে। পুকুর থেকে ফিরে এলাম। ইত্যাদি
পঞ্চমী বিভক্তি ছাড়াও অপাদান কারক হতে পারে। যেমন
. বিভক্তিলোকমুখে  কথা জেনেছি।
. তে বিভক্তিখনিতে সোনা পাওয়া যায়।
. /এর : রাতে বাঘের ভয়ে ঘরের বাহির হই না
সম্বন্ধ পদ অপাদানের সম্পর্ক
অনেক ক্ষেত্রেই অনুসর্গের পূর্বপদের সাথে একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্রে পূর্ব পদে ষষ্ঠী বিভক্তি যুক্ত হলেও কারক বিভক্তি হিসাবে এই ষষ্ঠী বিভক্তি মূল্য পায় না। এক্ষেত্রে ষষ্ঠী বিভক্তি কতকগুলো বিশেষ রীতি অনুসরণ করে
. তুলনা-বাচক ভাবের ক্ষেত্রে পূর্ব পদে বা এর বসে। যেমনরামের চেয়ে শ্যাম ছোটো।
. সর্বনামের পরে চেয়ে, থেকে, হতে অনুসর্গ থাকলে, সর্বনামের পরে ষষ্ঠী বিভক্তি বসে। যেমন
আমার থেকে সে বেশি জানে না।
তার চেয়ে শ্যাম ভালো লোক।
তোমার চেয়ে  কাজ আর কে ভালো করবে?
কিন্তু যখন কোনো কিছু প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি (ভয়, আশা, বিশ্বাস ইত্যাদি অর্থে) বিষয়টি এর সাথে যুক্ত হয়, তখন অতিরিক্ত অনুসর্গ যুক্ত হতে পারে। যেমন
তার কাছ থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি।
তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি
তবে এই অতিরিক্ত অনুসর্গ বাদ দিয়েও বাক্য হতে পারে। যেমন
তার থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি
. বিশেষ্য পদেরবাএরব্যবহৃত হয়। তবে বাহুল্য বিবেচনায় অনেক সময় তা বর্জিত হয়। যেমন
তুমি দেশের থেকে কবে ফিরলে?
কিম্বা
তুমি দেশ থেকে কবে ফিরলে?
অপাদান অধিকরণের সম্পর্ক
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপাদান কারকের সাথে অধিকরণের একটি নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। যেমন
. স্থানবাচক অপাদানঢাকা থেকে বাড়ি ফিরলাম। [‘ঢাকাস্থান, কিন্তু কারকের বিচারেঢাকা থেকেঅপাদান]
. কাল বাচক অপাদনসকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। [‘সকালকাল বা সময়, কিন্তু কারকের বিচারেসকাল থেকেঅপাদান]
. আধার বাচক অপাদানতিল থেকে তেল হয়। [‘তিলআধার বা পাত্র, কিন্তু কারকের বিচারেতিল থেকেঅপাদান]
এছাড়া তারতম্যের বিচারে অপাদান হয়। যেমন– আমার চেয়ে সে চালাক

No comments

Powered by Blogger.