বাক্য রূপান্তর
বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়। অর্থাৎ, বাক্য রূপান্তর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, বাক্যের অর্থ যেন পাল্টে না যায়। বাক্যের অর্থ পাল্টে গেলে বাক্যটি অন্য বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাক্য রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতি তথা রূপ (Form) পরিবর্তন করতে হবে, বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।
ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন-
অস্তিবাচক বাক্য : তুমি খুব ভাল।
নেতিবাচক বাক্য : তুমি মোটেও খারাপ নও। (ভাল- খারাপ)
অস্তিবাচক বাক্য : তুমি খুব ভাল।
নেতিবাচক বাক্য : তুমি মোটেও খারাপ নও। (ভাল- খারাপ)
খ) ‘না করলেই নয়’, ‘না করে পারবো না’ ইত্যাদি বাক্যাংশ যোগ করে অনেক অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন-
অস্তিবাচক বাক্য : তুমি কালকে আসবে।
নেতিবাচক বাক্য : তুমি কালকে না আসলেই নয়।
অস্তিবাচক বাক্য : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার ঢুকবেই।
নেতিবাচক বাক্য : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার না ঢুকে পারবেই না।
অস্তিবাচক বাক্য : তুমি কালকে আসবে।
নেতিবাচক বাক্য : তুমি কালকে না আসলেই নয়।
অস্তিবাচক বাক্য : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার ঢুকবেই।
নেতিবাচক বাক্য : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার না ঢুকে পারবেই না।
গ) নতুন কোন বিপরীতার্থক বা নঞর্থক (না বোধক) শব্দ যোগ করে। যেমন-
অস্তিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকল।
নেতিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টানো বন্ধ রাখলো না।
অস্তিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকল।
নেতিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টানো বন্ধ রাখলো না।
নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরের কৌশল
ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন-
নেতিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে উপস্থিত ছিল না।
অস্তিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে অনুপস্থিত ছিল।
নেতিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে উপস্থিত ছিল না।
অস্তিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে অনুপস্থিত ছিল।
খ) নেতিবাচক বাক্যের না বোধক বাক্যাংশকে কোন বিপরীতার্থক বিশেষণে রূপান্তর করেও অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন-
নেতিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তিনি কোনদিন চিন্তাও করেন নি।
অস্তিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তার কাছে অচিন্ত্যনীয় ছিল।
নেতিবাচক বাক্য : এসব কথা সে মুখেও আনতে পারত না।
অস্তিবাচক বাক্য : এসব কথা তার কাছে অকথ্য ছিল।
নেতিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তিনি কোনদিন চিন্তাও করেন নি।
অস্তিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তার কাছে অচিন্ত্যনীয় ছিল।
নেতিবাচক বাক্য : এসব কথা সে মুখেও আনতে পারত না।
অস্তিবাচক বাক্য : এসব কথা তার কাছে অকথ্য ছিল।
গ) নতুন কোন অস্তিবাচক বিপরীতার্থক শব্দ যোগ করে। যেমন-
নেতিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে নেই।
অস্তিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে অনুপস্থিত।
নেতিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে নেই।
অস্তিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে অনুপস্থিত।
প্রশ্নবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের কৌশল
মূলত প্রশ্নবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক থেকে সরাসরি নেতিবাচক বাক্যে পরিণত করলেই নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেবল প্রশ্নবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক হিসেবে কল্পনা করতে হয়। আর যেগুলো সরাসরি অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে অস্তি-নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে নেতিবাচক করতে হয়। যেমন-
প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?
নেতি : তুমি কালকে স্কুলে আসোনি।
প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?
নেতি : তুমি কালকে স্কুলে আসোনি।
প্রশ্ন : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি কি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ?
নেতি : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ না।
নেতি : ইডিপিডিবিডি ওয়েবসাইটটি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ না।
প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখোনি?
নেতি : তুমি ছবিটা না দেখে পারোনি।
নেতি : তুমি ছবিটা না দেখে পারোনি।
প্রশ্নবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর
কিছু প্রশ্নবাচক বাক্যকে স্বাভাবিকভাবে সরাসরি অস্তিবাচক থেকে প্রশ্নবাচকে রূপান্তরিত করা যায়। আর যেগুলো সরাসরি রূপান্তর করলে নেতিবাচক হয়, সেগুলোকে নেতি থেকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে অস্তিবাচক করতে হয়। যেমন-
প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখোনি?
অস্তি : তুমি ছবিটা দেখেছো।
অস্তি : তুমি ছবিটা দেখেছো।
প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?
অস্তি : তুমি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।
অস্তি : তুমি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।
অস্তি-নেতিবাচক (বিবৃতিমূলক) বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তর
বিবৃতিমূলক বাক্যে প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে সেগুলোকে বিপরীত বাক্যে (অস্তি হলে নেতি এবং নেতি হলে অস্তিবাচকে) সরাসরি রূপান্তর করলেই বাক্য রূপান্তর সম্পন্ন হয়। যেমন-
বিবৃতি : তুমি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।
প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে?
প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে উপস্থিত ছিলে?/ তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?
প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে?
প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে উপস্থিত ছিলে?/ তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?
বিবৃতি : তুমি ছবিটা দেখোনি।
প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি ছবিটা দেখোনি?
প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখেছো?
প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি ছবিটা দেখোনি?
প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখেছো?
সরল থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্যের কোন একটি অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি খন্ডবাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং তার খণ্ডবাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয়গুলোর কোনটি ব্যবহার করতে হয়। যেমন-
সরল বাক্য : ভাল ছেলেরা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।
জটিল বাক্য : যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।
জটিল বাক্য : যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।
সরল বাক্য : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
জটিল বাক্য : যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।
জটিল বাক্য : যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।
জটিল থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর : জটিল বাক্যটির অপ্রধান/ আশ্রিত খণ্ডবাক্যটিকে একটি শব্দ বা শব্দাংশে পরিণত করে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন-
জটিল বাক্য : যত দিন বেঁচে থাকব, এ কথা মনে রাখব।
সরল বাক্য : আজীবন এ কথা মনে রাখব।
সরল বাক্য : আজীবন এ কথা মনে রাখব।
জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
সরল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্যের কোন অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি পূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং পূর্ণ বাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হবে। যেমন-
সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)
যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)
সরল বাক্য : আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগিক বাক্য : আমি বহু কষ্ট করেছি এবং/ ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগিক বাক্য : আমি বহু কষ্ট করেছি এবং/ ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগক থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। অন্যদিকে সরল বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। তাই যৌগিক বাক্যের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রেখে বাকিগুলোকে সমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে। যৌগিক বাক্যে একাধিক পূর্ণ বাক্য থাকে এবং তাদের সংযোগ করার জন্য একটি অব্যয় পদ থাকে। সেই অব্যয়টি বাদ দিতে হবে। যেমন-
যৌগিক বাক্য : তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। (সমাপিকা ক্রিয়া- হয়েছে, হয়নি)
সরল বাক্য : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি। (‘হয়েছে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘হলেও’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)
সরল বাক্য : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি। (‘হয়েছে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘হলেও’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)
যৌগিক বাক্য : মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে। (সমাপিকা ক্রিয়া- করে ও করে)
সরল বাক্য : মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। (‘করে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘করলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)
সরল বাক্য : মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। (‘করে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘করলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)
[সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া; ক্রিয়াপদ]
জটিল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্যে কয়েকটি খণ্ডবাক্য থাকে, এবং সেগুলো পরস্পর নির্ভরশীল থাকে। জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
জটিল বাক্য : যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।
যৌগিক বাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।
যৌগিক বাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।
জটিল বাক্য : যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।
যৌগিক বাক্য : তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।
যৌগিক বাক্য : তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।
যৌগিক থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর : যৌগিক বাক্যে দুইটি পূর্ণ বাক্য কোন অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে।
তবে, সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলোর পূর্ণ বাক্য দুটির প্রথমেই বসাতে হবে, এমন কথা নেই; উপযুক্ত যে কোন জায়গাতেই বসানো যেতে পারে। যেমন-
যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
যৌগিক বাক্য : তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
জটিল বাক্য : যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
জটিল বাক্য : যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
যৌগিক বাক্য : এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।
জটিল বাক্য : এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।
জটিল বাক্য : এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।
No comments