93. পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় পথের দু’ধারে আছে মোর দেবালয়।

তীর্থ পবিত্র স্থান পুণ্যক্ষেত্র। অনেক মানুষ মনে করে সৃষ্টিকর্তার স্থান তীর্থে বা মন্দিরে। মানুষ তাই পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের জন্য তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ করে। পুণ্য প্রত্যাশী মানুষ লোকালয় থেকে বহুদূর পথের প্রান্তে নির্জন স্থানে বা মন্দিরে পবিত্র মনে স্রষ্টাকে স্মরণ করে। স্রষ্টার করুণা লাভের চেষ্টা করে। মানুষ ভাবে তীর্থই বুঝি সৃষ্টিকর্তার সাথে মিলনের একমাত্র পবিত্র স্থান। এই ভুল বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে যারা
পথের দুপাশের অসহায় মানুষকে অবহেলা করে অন্ধভাবে চলে, পথের শেষে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভে তারা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। কেননা দেবতার অধিস্থান শুধু মন্দিরে বা তীর্থে নয়, তিনি সর্বত্রই বিরাজমান। সুঃখ-দুঃখের এই মানব সংসারে সৃষ্টিকর্তা বহুরূপে তার সৃষ্টির মধ্যেই বিরাজ করেন। তাঁকে পথের দুপাশেও পাওয়া যায়, গহীন অরণ্যেও পাওয়া যায়, আবার জনাকীর্ণ লোকালয়েও পাওয়া যায়। সব মানুষকে একটি গভীর সত্য মনে রাখতে হবে যে, মানুষকে ভালোবাসা সেবার মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া সম্ভব। যিনি মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছেন পৃথিবীর সকল স্থানই তার কাছে তীর্থভূমি মনে হয়। মানুষকে ভালোবেসে জগৎ সংসারকে তীর্থক্ষেত্রে পরিণত করাই মানুষের বড় ধর্ম। মনুষ্যত্ত্বের গুণে মানুষ যখন নিজের স্বার্থের কথা ভুলে পরার্থে, মানুষের কল্যাণে, অসহায়ের সাহায্যে, আর্ত-পীড়িতের সেবার নিজেকে বিলিয়ে দেয় তখনই সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পায়। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেনজীব সেবাই ঈশ্বর সেবা।অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাকে পেতে হলে প্রথমেই তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে। মানব সমাজের প্রত্যেক জীবকে ভালোবাসাই সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়ার একমাত্র উপায়। সমাজ বিচ্ছিন্ন কোনো দূরবর্তী স্থানকে তীর্থ বা দেবালয় ভাবা ভুল
শিক্ষা: সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছাতে বহু দূরের তীর্থ ভ্রমণ নয়, সৃষ্টিকর্তার প্রত্যেক সৃষ্টিকে ভালোবাসা, সেবা করা মানব কল্যাণে জীবন বিলিয়ে দেওয়াই একমাত্র উপায়
লেখক: ভুপালী সরকার

No comments

Powered by Blogger.