210. গ্রীষ্মের দুপুর

ভুমিকা:
গ্রীষ্মের দুপুর মানেই সূর্যের প্রচন্ড তাপদাহ খাঁ খাঁ রোদ্দুর, তপ্ত বাতাসের আগুনের হলকা সবুজ পাতা নেতিয়ে পড়ার দৃশ্য বটের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া রাখাল ছেলে চারদিকে নিঝুম , নিস্তব্ধ,ঝিমধরা প্রকৃতি ঘামে দরদর তৃ্ষ্ণার্ত পথিক কবির ভাষায়
ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্মের দুপুরে
খাল বিল চৌচির জল নেই পুকুরে
মাঠে ঘাটে লোক নেই খাঁ খাঁ রোদ্দুর
পিপাসায় পথিকের ছাতি কাঁপে দুদ্দুর
গ্রীষ্মের দুপুরের অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য এটি রুক্ষ,শুষ্ক ,বৈচিত্র্যহীন,নিপাট দিনের স্থিরচিত্রগ্রামের কোনো
পুকুরঘাটে ,কুয়োতলায়,নদীর তীরে,বিস্তীর্ন চরাচরে রোদ প্রকৃতির দিকে তাকালে গ্রীষ্মের দুপুরের রূপ স্পষ্টভাবে দেখা যায়
গ্রীষ্মের দুপুরে প্রকৃতির অবস্থা :
চৈত্রের কাঠফাটা রোদে গ্রীষ্মের পদধ্বানি শোনা যায়বৈশাখজ্যৈষ্ঠ এলে সেই তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়সূর্যের প্রখোর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন নির্জীব হয়ে ওঠেসবজির নধর পাতা খরতাপে নুয়ে পড়েমাঝে মাঝে ঘূর্ণি হাওয়ায় ধুলো ওড়ে, ঝরে পড়ে গাছের হলুদ পাতাদূর আকাশে পাখনা মেলে চিল যেন বৃষ্টিকে আহবান জানায়পাতার আড়ালে ঘুঘু পাখির উদাসকরা ডাক শোনা যায়প্রকৃতি যেন পরিশ্রান্ত হয়ে নিঝুম মুহূর্তগুলো কাটাতে থাকেপুকুর ঘাটে তৃষ্ণার্ত কাক, গাছের ছায়ায় পশু পাখির নি:শব্দ অবস্থান গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের পরিচিত দৃশ্য
গ্রীষ্মের দুপুরে জনজীবন :
গ্রীষ্মের দুপুর মানবজীবনেও নিয়ে আসে নিশ্চলতার আমেজ করুন্মব্যস্ত জীবনে আসে অবসাদমাঠে-ঘাটে জীবনের সাড়া যায় কমেপ্রচন্ড রোদের মধ্যে যারা কাজ করে, তাদের মাথায় থাকে মাখালকরুন্মমুখর দিনে গ্রীষ্মের দুপুরে সময় কিছুটা ধরিগতিতে অগ্রসর হয় রাখাল ছেলে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়পথিকজন পথের ক্লান্তি ঘোছাতে বিশ্রামের প্রহর গোনে নি:শব্দ প্রকৃতি আর নীরব মানূষের কাছে গ্রীষ্মের দুপুর জেন স্থিরবৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন,কোথাও যেন স্বস্তি নেই,শান্তি নেইমাঠ-ঘাটন চৌচির,নদীজলাশয় জলশূন্যমাঠে মাঠে ধুলোওড়া বাতাস আগুনঢালা সূর্য,ঘর্মাক্ত দেহ,ক্লান্তি অবসাদে গ্রীষ্মের দুপুর যেন অসহনীয় হয়ে উঠেমুহূর্তের জন্যে প্রাণ সিক্ত হতে চায়,একটু ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শ পেতে চায় মন
গ্রীষ্মের দুপুর গ্রামজীবনে নিয়ে আসে বিশ্রামের সুযোগকেউ কেউ নির্জন দুপুরে দিবানিদ্রায় ঢলে পড়েগৃহীনিরা সংসারের কাজের একটু অবসরে বিশ্রামের সুযোগ খোঁজেতালপাখার বাতাসে একটু প্রাণ জুড়ায়শীতের পাটিতে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়আমবাগানের দুষ্টু ছেলেদের আনাগোনা হয়তো বেড়ে যায়
গ্রীষ্মের দুপুরে শহরের দৃশ্য অবশ্য অন্যরকমপ্রচন্ড রোদে রাস্তার পিচ গলতে থাকেরাস্তায় যানবাহনের চলাচল কমে আসেগলির ঝাঁপখোলা দোকানপাটে ঝিমধরা ভাবঘরেবাইরে করুন্মের জগৎ হঠাৎ যেন ঝিমিয়ে আসেঅফিস পাড়ার করুন্মব্যস্ততা সময় একটু শিথিল হয়ে আসেক্লান্তি শ্রান্তি ঘিরে ধরে করুন্মচঞ্চল জীবনপ্রবাহকেগ্রীষ্মের শান্ত দুপুর মনে করিয়ে দেয় ধরিত্রীর সঙ্গে মানুষের জন্ম-জন্মন্তরের সম্পর্কের কথাঅন্য এক উপলদ্ধির জগতে নিয়ে যায় মানুষকে
উপসংহার :
গ্রীষ্মের দুপুরের প্রখর তাপ প্রকৃতি জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে এই প্রভাব কেবল বাহ্যিক নয় ,অভ্যন্তরীনওরহস্যময় প্রকৃতির যেন এক গোপন আয়োজন গ্রীষ্মের তপ্ত আকাশে এক সময় দেখা যায় সজলকাজল মেঘনেমে আসে স্বস্তির বৃষ্টিগ্রীষ্মের দুপুরের ঝিমধরা প্রকৃতি আর নিশ্চল স্থবির জনজীবন,শস্যহীন মাঠ,নদীর ঘাটে বাঁকা নৌকা,রোদ ঝলসানো তপ্ত বাতাসের এই পরিচিত দৃশ্যের কথা সময় ভুলে যায় মানুষ

No comments

Powered by Blogger.