199. হাতে কাজ করায় অগৌরব নেই, অগৌরব হল মিথ্যায়, মূর্খতায়।
মানুষের প্রকৃত পরিচয় কর্ম ও সাফল্যের ওপর নির্ভর করে। জীবনে উন্নতির মূল চাবিকাঠি হচ্ছে পরিশ্রম। দৈহিক শ্রম দ্বারা মানুষ তার নিজের ভাগ্যকে নির্মাণ করে। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা কায়িক শ্রমকে ছোট মনে করে, নিজে কাজ করতে অপমানবোধ করে এবং মিথ্যা আর মূর্খতা দ্বারা নিজের গৌরব বৃদ্ধি করতে চায়। কিন্তু মিথ্যা পদে পদে তাদের ধ্বংস ডেকে আনে। মূর্খতা তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। যুগ যুগ ধরে কুলি মজুরের মতো লক্ষ কোটি শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। এদেরই অক্লান্ত শ্রম আর ঘামে মোটর, জাহাজ, রেলগাড়ি চলছে, গড়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া দালানকোঠা। আমাদের দেশের কৃষকরা আমাদের খাদ্যের যোগান দিতে ঝড়-বৃষ্টি রোদ্র উপেক্ষা করে ফসল ফলায়। এ কাজ তাদের কঠিন সাধনার কাজ। এতে তাদের গৌরব কমে না এই কাজের মধ্য দিয়েই তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাধক রূপে পরিগণিত হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে এই শ্রমজীবী মানুষ। আমাদের পোশাক শিল্পকে শ্রম দ্বারাই টিকিয়ে রেখেছে শ্রমিকশ্রেণি। আধুনিক বিশ্বের চালিকা শক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কাচাঁমাল কয়লা, যা উত্তোলন করে শ্রমিকরা। পৃথিবীতে যারা মহামানবের অবিধায় অভিসিক্ত হয়েছেন তারা কায়িক পরিশ্রম করেছেন। তাতে তাদের সম্মান কমেনি বরং বেড়েছে। অন্যের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা নেওয়ার মধ্যে কোনো গৌরব নেই। আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছেন- “পাঁচটি টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি টাকা উপার্জনের মধ্যে তৃপ্তি অনেক বেশি।” আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শৈশবে রুটির দোকানে কাজ করেছেন। হাতের কারুকার্যে চিত্রশল্পী কাজ হিসেবে পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়েছেন লিওনার্দো-দ্যা-ভিঞ্চি, পাবলো পিকাসো এবং ভ্যানগগের মতো ব্যক্তিবর্গ। মিথ্যা ও মূর্খতা নয় সাধুতা ও সত্যের ভিতর দিয়ে সত্তার মহিমা উদ্ভাসিত হয়। কাজের মাধ্যমে সমাজ স্বনির্ভর হয় এতে মানুষের অফুরন্ত শক্তির প্রকাশ ঘটে।
শিক্ষা: আমাদের কর্মশক্তি ভরা দুটি সবল হাত রয়েছে যা দ্বারা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন¦য়ে আমরা পেতে পারি সার্থক জীবনের সন্ধান এবং আত্মপ্রতিষ্ঠার শক্তি।
No comments