194. স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে।
ক্ষণস্থায়ী মানব জীবনে মানুষ অবিরাম ছুটে চলে সুখের সন্ধানে। কারো কাছে এই সুখ মানে হলে অগাধ অর্থ-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, আরাম-আয়েশ আর বিলাসিতা। আবার কারো কাছে সুখ মানেই হলো পরের জন্য কিছু করা, সমাজ, দশ ও দেশের মঙ্গল সাধন করা। আত্মকেন্দ্রিকতাকে বিসর্জন দিয়ে সকলের ভালোর জন্য কাজ করাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নেয়া। যারা শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, নিজের স্বার্থ সিদ্ধিকে জীবনে
অবশ্যম্ভাবী মনে করে তারা সবসময়ই পার্থিব সকল ভোগ্য বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেসবের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে নিজের আরাম আয়েশ নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের পূর্ণতা খোঁজে, বেঁচে থাকাকে সার্থক মনে করে। কিন্তু এই সবকিছু মানুষকে হয়তো সাময়িক সুখ দিতে পারে। জীবনকে কিছু দিনের জন্য উপভোগ্য করে তুলতে পারে। কিন্তু কখনোই স্বার্থক কিংবা পরিপূর্ণ করতে পারে না। একটা সময়ে এই সুখ আর থাকে না। বেঁচে থাকাকে অর্থহীন মনে হয়। অপরদিকে সত্যিকারের কল্যাণকামী মানুষেরা কখনোই কেবল নিজের সুখের কথা ভাবে না, স্বার্থের কথা ভাবে না। বরং সকলের স্বার্থই তাদের স্বার্থ, সকলের ভালোই তাদের ভালো। তারাই জানে কি করে সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকতে হয়। পরের জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা জীবনকে পরিপূর্ণতা দেয়। পৃথিবীর যত মহান ব্যক্তিদেরকে আমরা মনে রেখেছি তা পরের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার সুবাদেই। কেবল তাদেরকেই আমরা আমাদের মননে, চেতনায় বাঁচিয়ে রেখেছি। অন্যদিকে যারা কেবল নিজের জন্য বেঁচে ছিল তারা চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে মহাকালের অনন্ত অন্ধকারে। তারা জানতেও পারেনি সত্যিকারের বেঁচে থাকা কাকে বলে আর জীবনের সার্থকতা কোথায়। কিন্তু যারা পরের জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সুখকে উপভোগ করে। নিজ স্বার্থ আর সুখের চিন্তা ত্যাগ করে তারা মেতে ওঠে জীবনের অনাবিল আনন্দে। মৃত্যুর আগে ও পরে তারা সমানভাবে বাঁচে। এই বৃহৎ জগৎ-সংসারে প্রকৃত অর্থেই বেঁচে থেকে তারা রচনা করে স্বার্থক জীবন কাহিনী।
শিক্ষা: বেঁচে থাকার অর্থ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা নয়। পরের মঙ্গল ও সুখে নিজেকে নিবেদন করে নিজের সুখ সন্ধান করে বেঁচে থাকাই সত্যিকারের বাঁচা।
No comments