128. ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।

জীবনধারণের জন্য প্রত্যেক মানুষকেই কিছু চাহিদা পূরণ করতে হয়। আর ভোগের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। পৃথিবীতে মানুষের চাহিদারও যেমন সীমা নেই, তেমনই ভোগ্য জিনিসেরও সীমা নেই। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে কাঙ্ক্ষিত সবকিছু ভোগ করা সম্ভব হয় না। যখন তা সম্ভব হয় না তখন ভোগবাদী মানুষ কাঙ্ক্ষিত বস্তু ভোগ করার জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে। তখন ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা,
ভালো-খারাপ ইত্যাদির মধ্যকার পার্থক্য করার বোধশক্তি লোপ পায়। নিজেকে অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতির চাদরে মুড়িয়ে ফেলে। ফলে ভোগবাদী লোভী মানুষের কাছে সামাজিক মূল্যবোধের কোনো গুরুত্ব নেই। ভোগ মানুষকে যেমন লোভী করে তোলে, তেমনই স্বার্থপর করে তোলে। সমাজের গরীব-অসহায় মানুষেরা জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম অবলম্বন পাচ্ছে কি না তা ভাবার সময় ভোগবাদীদের নেই। তাদের ধ্যান-জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হল নিজের জীবন, আপন পরিবার। ভোগবাদী মানুষেরা সমাজকে কিছু দিতে পারে না, শুধু নিয়েই যায়। এসব মানুষকে কেউ কখনো সম্মান করে না, মর্যাদার চোখে দেখে না। অপর দিকে, ভোগের বিপরীত মেরুতে ত্যাগের অবস্থান। পৃথিবীর সব ভালো কাজের মূলে রয়েছে কারো না কারো ত্যাগ। ত্যাগ ছাড়া কোনো ভালো কাজ সম্পন্ন হয় না। মানবকল্যাণের জন্য যাঁরা শত শত বছর আগে ত্যাগ করে গেছেন, আজও আমরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তারা ত্যাগের মূর্ত প্রতীক হিসেবে আজও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.), যিশু খ্রিষ্ট, গৌতম বুদ্ধ, রামকৃষ্ণ, সক্রেটিস, নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসা, মার্টিন লুথার কিং, তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, মাস্টার দা সূর্যসেন, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখের নাম আজও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ সূর্যসন্তানরা যদি রাজপথে তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ না করতো তাহলে হয়তো আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে আর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতাম না। এছাড়া বাংলাদেশও স্বাধীনতা লাভ করেছে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ত্যাগের বিনিময়ে। জাতি হিসেবে আমরা আজ সেই ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল
শিক্ষা: ভোগ করার ইচ্ছা মানুষকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। ত্যাগ মানুষকে মহৎ করে তোলে, এনে দেয় অপার সম্মান। ত্যাগী মানুষের নাম পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে থাকে সম্মানের সাথে

No comments

Powered by Blogger.