19. আমাদের দেশ বা বাংলাদেশ বা জন্মভূমি বা মাতৃভূমি
ভূমিকা:
বাংলা ও বাঙালিকে ঘিরে যে দেশ সেটিই বাংলাদেশ। প্রকৃতির রূপসী কন্যা আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মাঠ, নদী, অরণ্য আর পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এই স্নিগ্ধ ও সুন্দর শান্তিময় দেশে বাঙালির প্রিয় জন্মভূমি। ১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন করা হয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র অর্থাৎ রাজধানী ঢাকা।
অবস্থান ও আয়তন:
বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। আর
পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা, মজোরাম ও মায়ানমার। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭, ৫৭০ বর্গকিলোমিটার বা ৫৬ হাজার বর্গমাইল।
পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা, মজোরাম ও মায়ানমার। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭, ৫৭০ বর্গকিলোমিটার বা ৫৬ হাজার বর্গমাইল।
জনসংখ্যা:
বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ তবুও জনসংখ্যায় ভরপুর। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখানে বাস করে ৯৯৩ জন লোক। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। জনসংখ্যার দিকে দিয়ে পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম।
জাতি, ভাষা, পেশা ও উৎসব:
বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও বাস করে। এছাড়া চাকমা, সাঁওতাল, ত্রিপুরা, মুরং, তংচঙ্গা ক্ষুদ্র জাতি বাস করে। এদের ভাষাও ভিন্নভিন্ন। এখানে বেশিরভাগ লোক বাঙালি তাই তাদের মাতৃভাষা অর্থাৎ জাতীয় ভাষা বাংলা। ভাষার দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম। ১৯৫২ সালে প্রাণের বিনিময়ে রক্ষা করা হয়েছিল বাংলাভাষা। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ তাই যে যার ইচ্ছা, শ্রেণি ও সামর্থ অনুসারে পেশা বেছে কাজ করে। তাই এখানে বহুপেশার লোক বাস করে। শহরের মানুষ বিচিত্র রকমের কাজে ব্যস্ত থাকে। কেউ অফিস-আদালতে কাজ করে, কেউ করে ব্যবসা-বাণিজ্য। শ্রমিকেরা কাজ করে কলকারখানায়। আবার গ্রামের মানুষজন মাছধরা, ফসল ফলানোসহ ভিন্নভিন্ন কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে বসবাসরত অনেক জাতি উৎসব পালন করে থাকে। জাতি অনুসারে উৎসবগুলো হলো মুসলমানদের দুটি ঈদ, হিন্দুদের অনেকগুলো পূজা, বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা আর খ্রিস্টানদের স্টারসানডে বা বড়দিন ইত্যাদি।
শিক্ষা:
শিক্ষা মানুষকে আধুনিক করে, সভ্য করে, জীবনের মান উন্নয়নে সাহায্য করে তাই বাংলাদেশে দিনদিন শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ শিক্ষা অর্জন করে বিদেশের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের জীবনের মান বৃদ্ধি করায় সচেষ্ট হচ্ছে।
শহর ও গ্রাম:
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা একটি বিশাল শহর। সারাদেশে ছোটবড় অনেক শহর রয়েছে। এসব শহরের উঁচুউঁচু দালানকোঠা ইটকাঠ আর পাথর দিয়ে তৈরি। শহরের পিচ ও সিমেন্টে তৈরি রাস্তাগুলো বেশ চওড়া। বেড়ানোর জন্য শহরে রয়েছে পার্ক ও উদ্যান। ছায়াঢাকা, পাখিডাকা এই গ্রামগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। নদীর তীরে তীরে গড়ে উঠেছে কত জনপদ। এসব জনপদে মানুষ ঘর বেঁধেছে, গড়ে তুলেছে গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজার। আম, জাম, কাঁঠাল ও বাঁশবনের নিবিড় ছায়াঘেরা বাংলাদেশের এক একটি গ্রাম। গ্রামের ঘরবাড়ি মাটি, বাঁশ, কাঠ, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি।
অর্থনৈতিক অবস্থা:
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ তাই কৃষির উপরেই এর অর্থনীতি নির্ভরশীল। কৃষির মাধ্যমে যা উৎপাদন করা হয় তা দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপতানি করে অনেক বিদেশি অর্থ আয় করা হয়। দেশের কৃষকরা খুব পরিশ্রমী। ভোর না হতেই লাঙল-জোয়াল কাঁধে তারা মাঠে যায়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তারা ফসল ফলায়। বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটায়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু রয়েছে। ঋতুর কারণে বাংলাদেশে রয়েছে মনকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অনেক ছোটবড় নদী। অবারিত সবুজ মাঠ, পশুপাখি, মনমাতানো ফুল, তৃপ্তিকরা ফল কী নাই বাংলাদেশে!
উপসংহার:
মায়ের মতো এই দেশ আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে রক্ষা করেছি বলে দেশকে আমরা ভালোবাসি। দেশের মাটি, দেশের মানুষকে নিয়ে আমরা গর্ব করি।
No comments