57. জ্বালানি সংকট ও বিকল্প শক্তি
ভূমিকা: বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এ দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই প্রয়োজন অনুসারে মানুষ তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারছে না। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী যোগানের ঘাটতি এখন জ্বালানি ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। জ্বালানি শক্তির উপরই নির্ভর করে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব, কিন্তু আমাদের দেশের জ্বালানি শক্তির সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। তাই এই জ্বালানি সংকটের সমাধানের জন্য বিকল্প শক্তির প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশে জ্বালানি শক্তির উৎস: বাংলাদেশ জ্বালানি শক্তিতে তেমন সমৃদ্ধ নয়। এ দেশে জ্বালানির অবাণিজ্যিক উৎস সমূহ হলো- জৈব জ্বালানি, কৃষির অবশিষ্টাংশ, বৃক্ষের কাঠ এবং প্রাণীর মলমূত্র ইত্যাদি। আবার জ্বালানির বানিজ্যিক উৎস সমূহ হলো- জীবাশ্ম জ্বালানি তথা কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং
পানি শক্তি ইত্যাদি।
জ্বালানি সংকটের কারণ: বাংলাদেশের জ্বালানির অন্যতম উৎস হলো কয়লা, গ্যাস এবং তেল। শিল্প,পরিবহন, রান্না এবং জমিতে সেচের কাজে প্রচুর গ্যাস, কয়লা এবং তেল ব্যবহার করা হয়। নিম্নে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল এবং পানি শক্তির সংকটের কারণ সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো-
প্রাকৃতিক গ্যাস সংকটের কারণ: বাংলাদেশের অন্যতম জ্বালানি সম্পদ হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। এটি মোট বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের ৭৫ ভাগ পূরণ করে। এদেশে গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ২৫ টি। কিন্তু ১৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের ৮৩টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। বাংলাদেশ যে সব আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথে গ্যাস উত্তোলন এবং আবিষ্কারের জন্য চুক্তি করেছে তাদের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। নাইকো নামে কানাডার অখ্যাত কোম্পানির কাছে টেংরাটিলাসহ সিলেটের বিরাট সম্ভাবনাময় এলাকা ইজারা দেওয়া হয়। কোম্পানীটি গ্যাস ক্ষেত্রের মরাত্মক ক্ষতি করেছে। আমেরিকার অক্সিডেন্টাল কোম্পানি মৌলভীবাজারের মাগুড়ছড়ায় কূপ খনন কাজ শুরু করলেও ১২ দিনের মাথায় অগ্নিকান্ডের মতো বিপর্যয় ঘটে। এ আগুন দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ চলতে থাকে। এতে দেশের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ২৮ কোটি মার্কিন ডলার। এভাবে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট তৈরি হচ্ছে।
কয়লা সংকটের কারণ: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রংপুরের খালাশপীর, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া,ফুলবাড়ি দীঘিপাড়া এবং বগুড়ার জামালগঞ্জসহ মোট ৫টি কয়লা ক্ষেত্র আছে। আমাদের দেশে বিপুল পরিমানে উন্নত মানের কয়লা আছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রকৌশলী এবং টেকনোশিয়ানরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ নয়। সঠিক উপায়ে উত্তোলন করতে না পারার কারণে কয়লা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
খনিজ তেলের সংকট: ১৯৮৬ সালে সিলেটে হরিপুরের গ্যাস ক্ষেত্রের ৭ম কূপ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ তেল উৎপাদন শুরু হলে ১৯৯৪ সাল থেকে এর তেল উৎপাদন স্থগিত করা হয়। দেশে খনিজ তেলের যে চাহিদা সেই অনুযায়ী খনি নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে তেলের চাহিদা ৪৫০০০ ব্যারেল। যার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এ দেশে তেলের খনি সন্ধানে পরিকল্পনার অভাব এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাবের কারণে মানুষের চাহিদার তুলনায় তেলের সংকট বেড়েই চলেছে।
বিকল্প শক্তির উৎস: জ্বালানি সংকটের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির জন্য সারা বিশ্বের মানুষ আজ বিকল্প শক্তির উৎস খুঁজে চলেছে। এ সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক শক্তি সম্মেলনে মিলিত হচ্ছে। তারা পারস্পরিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব দিয়ে চৌদ্দটি বিকল্প উৎসের কথা বলেছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সৌর শক্তি, সমুদ্রের বায়ু শক্তি, পরমাণু শক্তি, জোয়ার ভাটা থেকে প্রাপ্ত শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, সাগরের তাপীয় শক্তি এবং বায়ো গ্যাস ইত্যাদি।
জৈব গ্যাস: জৈব গ্যাস হলো বাতাসের অনুপস্থিতিতে জৈব বস্তুর অনুজীবীয় ভাঙ্গনের ফলে সৃষ্ট গ্যাস। এই গ্যাস মূলত মিথেন এবং কার্বন-ডাই অক্সাইডের সমন্বয়ে গঠিত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা সায়েন্স ল্যাবরেটরির যৌথ উদ্যোগে সত্তর দশকের প্রথম দিকে জৈব গ্যাস উৎপাদনের যন্ত্র নির্মাণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ৩ ঘনফুট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন জৈব গ্যাস উৎপাদক যন্ত্র স্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে গবাদি পশুর মোট সংখ্যা ২,৪১,৯০,০০০ যা থেকে প্রতিদিন ২৪,২০,০০০০০ কিলোগ্রাম বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই পরিমাণ পশু বর্জ্য থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩,১৯,১০৯ ঘনমিটার জৈব গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। ২০০৪-০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি। এটি ১৯৯৬ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। এই পশু র্বজ্য থেকে আরো বেশি জৈব গ্যাস তৈরি সম্ভব। ৫-৬টি গবাদি পশু যে পরিবারে আছে সে পরিবারের দৈনন্দিন জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সাধারণ আকৃতির জৈব গ্যাস উৎপাদন যন্ত্রই যথেষ্ট। জৈব গ্যাস জ্বালানি গ্যাস এবং কেরোসিনের উপর চাপ কমায়।
সৌর শক্তি: সৌর শক্তি বিকল্প জ্বালানির অন্যতম উৎস। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এ দেশে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর এর মাঝা-মাঝি সময় পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। বছরের বাকী সময় আকাশ মেঘমুক্ত এবং রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে। সুতরাং সূর্যরশ্মি জ্বালানির অভাব মেটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সূর্যের তাপ শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে ব্যবহার উপযোগী করা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে সৌর শক্তির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
বায়ু শক্তি: পৃথিবীর যে সকল দেশে সারা বছর একই দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় তারা বায়ু প্রবাহ বিকল্প শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বৃহত্তর কাজে লাগাতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বায়ু শক্তি ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পরমাণু শক্তি: জ্বালানি আজ বিশ্বের অন্যতম একটি সমস্যা। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিকল্প শক্তি হিসেবে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। বর্তমান বিশ্বে ৪২০টি পরমাণু ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। এদের মধ্যে ফ্রান্সে ৫৯টি এবং বেলজিয়ামে ৫৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ফ্রান্স ৭৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় পরমাণু কেন্দ্র থেকে। চীন এ খাত থেকে উৎপাদন করছে ৯ হাজার মেগাওয়াট, ভারত ৪ হাজার ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২০২০ সালের মধ্যে পাকিস্তান ৭ হাজার,ভারত ২০ হাজার এবং চীন ৪০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়। এ লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ১৩ মে বাংলাদেশ রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তিতে সাক্ষর করে। এরপর ২০০৯ সালের ২১ মে মস্কোয় বাংলাদেশ ও রাশিয়া পরমাণু জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় ‘কাঠামো চুক্তি’স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট মোকাবিলার জন্য পরমাণু ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি।
অন্যান্য শক্তি: অন্যান্য শক্তিগুলো হলো জোয়ার ভাটা থেকে প্রাপ্ত শক্তি, সাগরের তাপীয় শক্তি, তরঙ্গ শক্তি প্রভৃতি। এই বিকল্প শক্তি গুলো জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার: বাংলাদেশের ভূ-গর্ভে যথেষ্ট খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা থাকার কথা বলা হলেও নানা জটিলতার কারণে তা আবিষ্কার করা যায়নি। ফলে ধীরে ধীরে এ দেশে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদেরকে তাই জ্বালানির বিকল্প শক্তির উৎসগুলো খুঁজতে হবে। দেশের জ্বালানি সংকট দূর করে বিকল্প শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরো নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশে জ্বালানি শক্তির উৎস: বাংলাদেশ জ্বালানি শক্তিতে তেমন সমৃদ্ধ নয়। এ দেশে জ্বালানির অবাণিজ্যিক উৎস সমূহ হলো- জৈব জ্বালানি, কৃষির অবশিষ্টাংশ, বৃক্ষের কাঠ এবং প্রাণীর মলমূত্র ইত্যাদি। আবার জ্বালানির বানিজ্যিক উৎস সমূহ হলো- জীবাশ্ম জ্বালানি তথা কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং
পানি শক্তি ইত্যাদি।
জ্বালানি সংকটের কারণ: বাংলাদেশের জ্বালানির অন্যতম উৎস হলো কয়লা, গ্যাস এবং তেল। শিল্প,পরিবহন, রান্না এবং জমিতে সেচের কাজে প্রচুর গ্যাস, কয়লা এবং তেল ব্যবহার করা হয়। নিম্নে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল এবং পানি শক্তির সংকটের কারণ সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো-
প্রাকৃতিক গ্যাস সংকটের কারণ: বাংলাদেশের অন্যতম জ্বালানি সম্পদ হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। এটি মোট বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের ৭৫ ভাগ পূরণ করে। এদেশে গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ২৫ টি। কিন্তু ১৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের ৮৩টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। বাংলাদেশ যে সব আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথে গ্যাস উত্তোলন এবং আবিষ্কারের জন্য চুক্তি করেছে তাদের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। নাইকো নামে কানাডার অখ্যাত কোম্পানির কাছে টেংরাটিলাসহ সিলেটের বিরাট সম্ভাবনাময় এলাকা ইজারা দেওয়া হয়। কোম্পানীটি গ্যাস ক্ষেত্রের মরাত্মক ক্ষতি করেছে। আমেরিকার অক্সিডেন্টাল কোম্পানি মৌলভীবাজারের মাগুড়ছড়ায় কূপ খনন কাজ শুরু করলেও ১২ দিনের মাথায় অগ্নিকান্ডের মতো বিপর্যয় ঘটে। এ আগুন দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ চলতে থাকে। এতে দেশের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ২৮ কোটি মার্কিন ডলার। এভাবে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট তৈরি হচ্ছে।
কয়লা সংকটের কারণ: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রংপুরের খালাশপীর, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া,ফুলবাড়ি দীঘিপাড়া এবং বগুড়ার জামালগঞ্জসহ মোট ৫টি কয়লা ক্ষেত্র আছে। আমাদের দেশে বিপুল পরিমানে উন্নত মানের কয়লা আছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রকৌশলী এবং টেকনোশিয়ানরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ নয়। সঠিক উপায়ে উত্তোলন করতে না পারার কারণে কয়লা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
খনিজ তেলের সংকট: ১৯৮৬ সালে সিলেটে হরিপুরের গ্যাস ক্ষেত্রের ৭ম কূপ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ তেল উৎপাদন শুরু হলে ১৯৯৪ সাল থেকে এর তেল উৎপাদন স্থগিত করা হয়। দেশে খনিজ তেলের যে চাহিদা সেই অনুযায়ী খনি নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে তেলের চাহিদা ৪৫০০০ ব্যারেল। যার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এ দেশে তেলের খনি সন্ধানে পরিকল্পনার অভাব এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাবের কারণে মানুষের চাহিদার তুলনায় তেলের সংকট বেড়েই চলেছে।
বিকল্প শক্তির উৎস: জ্বালানি সংকটের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির জন্য সারা বিশ্বের মানুষ আজ বিকল্প শক্তির উৎস খুঁজে চলেছে। এ সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক শক্তি সম্মেলনে মিলিত হচ্ছে। তারা পারস্পরিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব দিয়ে চৌদ্দটি বিকল্প উৎসের কথা বলেছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সৌর শক্তি, সমুদ্রের বায়ু শক্তি, পরমাণু শক্তি, জোয়ার ভাটা থেকে প্রাপ্ত শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, সাগরের তাপীয় শক্তি এবং বায়ো গ্যাস ইত্যাদি।
জৈব গ্যাস: জৈব গ্যাস হলো বাতাসের অনুপস্থিতিতে জৈব বস্তুর অনুজীবীয় ভাঙ্গনের ফলে সৃষ্ট গ্যাস। এই গ্যাস মূলত মিথেন এবং কার্বন-ডাই অক্সাইডের সমন্বয়ে গঠিত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা সায়েন্স ল্যাবরেটরির যৌথ উদ্যোগে সত্তর দশকের প্রথম দিকে জৈব গ্যাস উৎপাদনের যন্ত্র নির্মাণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ৩ ঘনফুট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন জৈব গ্যাস উৎপাদক যন্ত্র স্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে গবাদি পশুর মোট সংখ্যা ২,৪১,৯০,০০০ যা থেকে প্রতিদিন ২৪,২০,০০০০০ কিলোগ্রাম বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই পরিমাণ পশু বর্জ্য থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩,১৯,১০৯ ঘনমিটার জৈব গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। ২০০৪-০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি। এটি ১৯৯৬ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। এই পশু র্বজ্য থেকে আরো বেশি জৈব গ্যাস তৈরি সম্ভব। ৫-৬টি গবাদি পশু যে পরিবারে আছে সে পরিবারের দৈনন্দিন জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সাধারণ আকৃতির জৈব গ্যাস উৎপাদন যন্ত্রই যথেষ্ট। জৈব গ্যাস জ্বালানি গ্যাস এবং কেরোসিনের উপর চাপ কমায়।
সৌর শক্তি: সৌর শক্তি বিকল্প জ্বালানির অন্যতম উৎস। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এ দেশে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর এর মাঝা-মাঝি সময় পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। বছরের বাকী সময় আকাশ মেঘমুক্ত এবং রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে। সুতরাং সূর্যরশ্মি জ্বালানির অভাব মেটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সূর্যের তাপ শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে ব্যবহার উপযোগী করা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে সৌর শক্তির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
বায়ু শক্তি: পৃথিবীর যে সকল দেশে সারা বছর একই দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় তারা বায়ু প্রবাহ বিকল্প শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বৃহত্তর কাজে লাগাতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বায়ু শক্তি ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পরমাণু শক্তি: জ্বালানি আজ বিশ্বের অন্যতম একটি সমস্যা। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিকল্প শক্তি হিসেবে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। বর্তমান বিশ্বে ৪২০টি পরমাণু ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। এদের মধ্যে ফ্রান্সে ৫৯টি এবং বেলজিয়ামে ৫৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ফ্রান্স ৭৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় পরমাণু কেন্দ্র থেকে। চীন এ খাত থেকে উৎপাদন করছে ৯ হাজার মেগাওয়াট, ভারত ৪ হাজার ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২০২০ সালের মধ্যে পাকিস্তান ৭ হাজার,ভারত ২০ হাজার এবং চীন ৪০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়। এ লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ১৩ মে বাংলাদেশ রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তিতে সাক্ষর করে। এরপর ২০০৯ সালের ২১ মে মস্কোয় বাংলাদেশ ও রাশিয়া পরমাণু জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় ‘কাঠামো চুক্তি’স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট মোকাবিলার জন্য পরমাণু ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি।
অন্যান্য শক্তি: অন্যান্য শক্তিগুলো হলো জোয়ার ভাটা থেকে প্রাপ্ত শক্তি, সাগরের তাপীয় শক্তি, তরঙ্গ শক্তি প্রভৃতি। এই বিকল্প শক্তি গুলো জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার: বাংলাদেশের ভূ-গর্ভে যথেষ্ট খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা থাকার কথা বলা হলেও নানা জটিলতার কারণে তা আবিষ্কার করা যায়নি। ফলে ধীরে ধীরে এ দেশে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদেরকে তাই জ্বালানির বিকল্প শক্তির উৎসগুলো খুঁজতে হবে। দেশের জ্বালানি সংকট দূর করে বিকল্প শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরো নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
No comments