130. মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য
ভূমিকা: পৃথিবীতে হাজারও
সম্পর্কের মাঝে
সব থেকে
তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্কের
বন্ধন গড়ে
ওঠে সন্তান
এবং মাতাপিতার
মধ্যে। যারা
আমাদেরকে এই
পৃথিবীতে এনে
এর অফুরন্ত
সৌন্দর্য উপভোগ
করার সুযোগ
করে দিল
তারা আমাদের
শ্রদ্ধেয় বাবা-মা। খুব
অসহায় অবস্থায়
একটি শিশু
জন্মগ্রহণ করে।
পৃথিবীতে এসে
পিতা-মাতার
যথাযথ লালন-পালন, আদর, স্নেহ, মমতা ও
শিক্ষা-দীক্ষার
মাঝে বেড়ে
ওঠে সন্তান।
সুতরাং সন্তানের
জীবনে পিতামাতার
অবদান অনস্বীকার্য।
পিতা-মাতার
এই অবদান
পরিমাপ করা
বা এর
মূল্য নির্ণয়
করা কোনো
সন্তানের পক্ষেই
পুরোপুরিভাবে সম্ভব
নয়। সন্তানের
জন্য পিতামাতা
একমাত্র নিরাপদ
স্থান। সুতরাং
প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি তাদের যে কর্তব্য তা সঠিকভাবে পালন করা এবং সব সময় তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা।
প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি তাদের যে কর্তব্য তা সঠিকভাবে পালন করা এবং সব সময় তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা।
মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য: সন্তানের জন্য
আল্লাহর শ্রেষ্ঠ
নিয়ামত হচ্ছে
তার মাতাপিতা।
একারণে সন্তানের
জীবনে মাতা-পিতার গুরুত্বও
সবচেয়ে বেশি।
তাদের অধিকার
প্রদান করাই
সন্তানের দায়িত্ব
ও কর্তব্য।
সন্তানদের দায়িত্ব
ও কর্তব্যের
মধ্যে সব
থেকে প্রথমে
যেটা আসে
তা হলো
পিতা-মাতার
সাথে সুসম্পর্ক
বজায় রাখা,
তাদের প্রতি
আনুগত্য প্রকাশ
করা। বাবা-মা’র
সন্তুষ্টি অনুযায়ী
সন্তানের পথ
চলা উচিত।
প্রত্যেক সন্তানের
উচিত সব
সময় পিতা-মাতার বাধ্য
থাকা এবং
তাদের আদেশ
নিষেধ মেনে
চলা। বাবা-মায়ের যখন
বার্ধক্য চলে
আসে তখন
তারা নবজাতক
শিশুর মতোই
অসহায় হয়ে
পড়েন। এক্ষেত্রে
পিতা-মাতাকে
বোঝা না
ভেবে তাদের
অভিভাবকত্ব গ্রহণ
করা সন্তানের
দায়িত্ব। ইসলাম
ধর্মে বলা
হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি
বৃদ্ধ অবস্থায়
তার বাবা-মাকে পেল
কিন্তু তাদের
সেবা-যত্ন
করল না
তার মতো
হতভাগা আর
কেউ নেই।’
পাশ্চাত্য মনীষী
রাস্কিন মনে
করেন পৃথিবীতে
মানুষের তিনটি
কর্তব্য আছে-‘‘Duty
towards God, duty towards parents and duty towards mankind’’. ফলে পেশাগত
সফলতা টিকিয়ে
রাখতে এবং
তথাকথিত অভিজাত
সমাজে নিজের
মূল্যবোধ বজায়
রাখতে গিয়ে
সন্তানের কাছে
তার নিজের
বৃদ্ধ বাবা-মার স্থান
হয় বৃদ্ধাশ্রম।
এই অপসংস্কৃতির
হাওয়া আমাদের
দেশেও বইছে।
আমাদের শিক্ষিত
সচেতন সমাজের
উচিত এটা
রোধ করা।
তাই পিতা-মাতা মনে
কষ্ট পায়
এমন কোনো
কাজ করা
উচিত নয়।
বিভিন্ন ধর্মে পিতামাতার স্থান: ধর্ম যাই
হোক সন্তান
এবং পিতা-মাতার মধ্যকার
ভালোবাসার অনুভূতিগুলো
একই রকম
ও অকৃত্রিম।
প্রত্যেক ধর্মেই
মাতাপিতাকে মর্যাদাপূর্ণ
ব্যক্তি হিসেবে
বিবেচনা করা
হয়েছে। ইসলাম
ধর্মের পবিত্র
কুরআন এবং
হাদীস শরীফে
মাতা-পিতাকে
সর্বোচ্চ আসনে
ভূষিত করে
বলা হয়েছে।
হাদিসে আছে-
‘পৃথিবীতে যদি
সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত
অন্য কাউকে
সেজদা করার
হুকুম দেওয়া
হতো, তবে তা
হতো মাতা-পিতাকে সেজদা
করা।’ হিন্দু ধর্মগ্রন্থে
উল্লেখ আছে
‘জননী স্বর্গ
অপেক্ষা গরীয়সী।
পিতা স্বর্গ,
পিতা ধর্ম,
পিতাই পরম
তপস্যার ব্যক্তি।’
খ্রিস্টান ধর্মেও
একই রকমের
কথা উল্লেখ
আছে। বৌদ্ধ
ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে
বলা হয়েছে
‘মাতাপিতার সেবা
করাই সবচেয়ে
উত্তম’।
মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত: ইতিহাস পর্যালোচনা
করলে দেখা
যায় পৃথিবীতে
মরেও যারা
অমর এবং
চিরস্মরণীয় হয়ে
মানুষের হৃদয়ে
আজও বেঁচে
আছেন। তাঁরা
সকলেই মাতৃ
ও পিতৃভক্তির
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
স্থাপন করেছেন।
আমাদের প্রিয়
নবী রাসূল
(স.) শৈশবেই তাঁর
মাকে হারিয়ে
দুধমাতা হালিমার
স্নেহ-মমতায়
বেড়ে ওঠেন।
দুধমাতা হলেও
তিনি তাঁকে
নিজের মায়ের
মতোই ভালোবাসতেন।
হযরত বায়েজীদ
বোস্তামি ও
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের
নাম ইতিহাসে
মাতৃভক্তদের তালিকায়
চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে
লেখা থাকবে।
রাম পিতৃসত্ব
পালনের উদ্দেশ্যে
চৌদ্দবছর বনবাস
কাটিয়েছিলেন। হযরত
আব্দুল কাদির
জিলানী, হাজী মুহম্মদ
মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন
ও আলেকজান্ডার
প্রমুখ মহান
ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি
শ্রদ্ধা-ভক্তি
প্রদর্শনের ক্ষেত্রে
ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে
চির স্মরণীয়
ও বরণীয়
হয়ে আছেন
এবং থাকবেন।
পিতা-মাতার প্রত্যাশা পূরণ: সন্তানের
বেড়ে ওঠা,
তার যথাযথ
লালন-পালন,
তাকে মানুষের
মতো মানুষ
করে গড়ে
তোলা এসব
ঘিরেই পিতা-মাতার জগৎ।
পিতামাতা সন্তানের
জন্য সীমাহীন
কষ্ট স্বীকার
করেন। সব
বাবা-মার
একটাই প্রত্যাশা-‘আমার সন্তান
যেন থাকে
দুধে ভাতে’।
সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত
হয়ে ওঠার
পেছনে বাবা-মার নিরলস
সাধনা বিরাট
ভূমিকা পালন
করে। প্রত্যেক মাতা-পিতাই চান
তাদের ছেলেমেয়েরা
সুসন্তান হিসেবে
সমাজে মাথা
তুলে দাঁড়াক,
সকল প্রকার
অন্যায় ও
মিথ্যাকে প্রতিহত
করার ক্ষমতা
অর্জন করুক।
এসব প্রত্যাশা
পূরণ করার
মাধ্যমেও তাদের
প্রতি কর্তব্য
পালন করা
যায়।
অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকা: সব
রকম পরিস্থিতিতে
পিতামাতার প্রতি
অনুগত থাকতে
হবে এবং
বিরক্ত হওয়া
যাবে না।
সন্তান যতো
বড় মাপের
মানুষই হোক
না কেনো
বাবা-মার
কাছে সে
শুধুমাত্র তাদের
সন্তান। বাবা-মা তাদের
সাধ্যমতো আমাদেরকে
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য
দেওয়ার চেষ্টা
করেন। কিন্তু
কখনও কিছু
দিতে ব্যর্থ
হলে তাদের
প্রতি ভ্রুক্ষেপ
করা যাবে
না। সন্তানের
কাছ থেকে
তারা সন্তানস্বরূপ
বিনয়ী আচরণই
আশা করেন।
পিতামাতা সন্তানের
সর্বোত্তম বন্ধু
তাদেরকে শান্তিতে
এবং চিন্তামুক্ত
অবস্থায় রাখা
সন্তানের কর্তব্য।
পিতামাতার আদর্শ ও সম্মান বজায় রাখা: প্রত্যেক সন্তানেরই
উচিত তাদের
পিতামাতার আদর্শ
ও ন্যায়নীতি
অনুসরণ করে
চলা। সমাজে
তাদের মান
সম্মান ক্ষুন্ন
হয় এমন
কোনো কাজ
করা উচিত
নয়। পিতামাতার
ভালোবাসা এতটাই
গভীর যে
সন্তান বিপথগামী
হলেও তাকে
দূরে সরিয়ে
রাখতে পারে
না। তাই
সব সময়
তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে
চলতে হবে।
তবে পিতামাতা
যদি ধর্মবিরোধী
কোনো কাজ
যেমন-শিরক
ও কুফরে
লিপ্ত হতে
বলে তবে
সে ক্ষেত্রে
তাদের নির্দেশ
মানা যাবে
না। সমাজে
যারা পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব
ও সহকর্মী
তাদের সাথে
সুসম্পর্ক রেখে
পিতামাতার সম্মান
বৃদ্ধি করা
যায়।
সন্তান ও পিতামাতার মধ্যকার সম্পর্ক: সন্তান তার
পিতামাতার সাথে
সব সময়
সদাচরণ করবে
এবং কোমল
কণ্ঠে ও
মার্জিত ভাষায়
কথা বলবে।
কোনো অবস্থাতেই
পিতামাতার সাথে
সম্পর্ক ছিন্ন
করা যাবে
না। সন্তান
ভূমিষ্ঠ হওয়ার
পর থেকে
পিতা তার
ভরণ-পোষণ
ও লালন
পালনের ব্যবস্থা
করে। মাতৃদুগ্ধ
সন্তানের আহারের
সংস্থান করেন।
সুতরাং সন্তানের
সাথে পিতামাতার
রক্তের এবং
নাড়ীর বন্ধন।
বিপথগামীতা এবং
অবাধ্যতার দ্বারা
এই বন্ধনকে
তুচ্ছ তাচ্ছিল্য
করা উচিত
নয়।
মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয়: মৃত্যুর পর
পিতামাতার বিদেহী
আত্মার মাগফিরাত
ও শান্তিকামনা
করে সন্তানের
দোয়া করতে
হবে। আল্লাহ
তায়ালা কোরআনে
বলেছেন- ‘রাব্বির হামহুমা
কামা রাব্বায়ীয়ানী
সাগীরা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ!
আমার পিতা-মাতার প্রতি
রহমত বর্ষণ
করুন যেমনিভাবে
তারা আমাকে
শৈশবে লালন
পালন করেছেন’।
মৃত্যুর পূর্বে
পিতামাতার কোনো
ঋণ বা
দেনা থাকলে
তা পরিশোধ
করা সন্তানেরই
কর্তব্য। ঋণ
পরিশোধ করলে
পিতামাতা ও
সন্তান উভয়েই
পরকালে লাভবান
হবে। পূর্বে
কারও সাথে
ওয়াদাবদ্ধ হলে
তা পূরণ
করা সন্তানের
দায়িত্ব।
উপসংহার: ইসলাম ধর্ম
অনুযায়ী- মাতা-পিতার
সন্তুষ্টি অর্জন
ব্যতীত কোনো
ব্যক্তি বেহেশতে
স্থান পাবে
না। পিতামাতার
সাথে নফরমানী
করলে পার্থিব
জীবনেও লাঞ্চনার
স্বীকার হতে
হবে এবং
পরকালেও কঠোর
শাস্তি ভোগ
করতে হবে।
অন্যান্য ধর্মেও
পিতামাতার প্রতি
দায়িত্ব ও
কর্তব্য পালনের
ব্যাপারে কঠোর
বাণী উচ্চারিত
হয়েছে। সুতরাং
ইহকালীন এবং
পরকালীন মুক্তির
পথ সুগম
করতে হলে
পিতামাতার প্রতি
কর্তব্যগুলো ঠিকভাবে
পালন করতে
হবে। সব
সময় মনে
রাখতে হবে
প্রত্যেক বাবা-মা তার
সন্তানের ভালো
চান। সুতরাং
তাদেরকে মেনে
চলতে হবে।
No comments