উচ্চারণবিধি

স্বরধ্বনির উচ্চারণ
স্বরধ্বনির উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে বের হয়ে কোথাও বাধা পায় না। মূলত জিহবার অবস্থান ঠোঁটের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। নিচে স্বরধ্বনির উচ্চারণ একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-


জিহবার অবস্থান
জিহবা সামনে আগাবে
ঠোঁটের প্রসারণ ঘটবে
জিহবা শায়িত অবস্থায়
ঠোঁট স্বাভাবিক/ বিবৃত
জিহবা পিছিয়ে আসবে
ঠোঁট গোলাকৃত হবে
উচ্চে
(উচ্চসম্মুখ স্বরধ্বনি)

(উচ্চ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি)
উচ্চমধ্যে
(মধ্যাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি)

(মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি)
নিম্নমধ্যে
অ্যা
(নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি)

(নিম্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি)
নিম্নে

(কেন্দ্রীয় নিমণাবস্থিত স্বরধ্বনি, বিবৃত ধ্বনি)


যৌগিক স্বরধ্বনি
পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে তারা উচ্চারণের সময় সাধারণত একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয় যৌগিক স্বর, সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর
বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বর মোট ২৫টি তবে যৌগিক স্বরবর্ণ মাত্র ২টি- , অন্য যৌগিক স্বরধ্বনিগুলোর নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ
উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে
স্পর্শ ব্যঞ্জন : থেকে পর্যন্ত প্রথম ২৫ টি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখগহবরের কোন না কোন জায়গা স্পর্শ করে যায়। এজন্য এই ২৫টি বর্ণকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি বা স্পৃষ্টধ্বনি
 অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ ধ্বনি : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় বা ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাসের জোর বেশি থাকে, তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে আর যে ধ্বনিগুলোতে বাতাসের জোর কম থাকে, নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না, তাদেরকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে , , , - এগুলো অল্পপ্রাণ ধ্বনি আর , , , - এগুলো মহাপ্রাণ ধ্বনি

ঘোষ অঘোষ ধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, অর্থাৎ গলার মাঝখানের উঁচু অংশে হাত দিলে কম্পন অনুভূত হয়, তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে। আর যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন, , , , - এগুলো অঘোষ ধ্বনি। আর , , , - এগুলো ঘোষ ধ্বনি
উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি : , , , - এই চারটি ধ্বনি উচ্চারণের শেষে যতক্ষণ ইচ্ছা শ্বাস ধরে রাখা যায়, বা শিশ্ দেয়ার মতো করে উচ্চারণ করা যায়। এজন্য এই চারটি ধ্বনিকে বলা হয় উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এগুলোর মধ্যে , , - অঘোষ অল্পপ্রাণ- ঘোষ মহাপ্রাণ
(বিসর্গ) : অঘোষ ‘’- উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনিই হলো ‘ বাংলায় একমাত্র বিস্ময়সূচক অব্যয়ের শেষে বিসর্গ ধ্বনি পাওয়া যায়। পদের মধ্যেবর্ণটি থাকলে পরবর্তী ব্যঞ্জনের উচ্চারণ দুইবার হয়, কিন্তুধ্বনির উচ্চারণ হয় না
কম্পনজাত ধ্বনি- : ‘ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ কম্পিত হয়, বা কাঁপে এবং দন্তমূলকে কয়েকবার আঘাত করেউচ্চারিত হয়। এজন্য’-কে বলা হয় কম্পনজাত ধ্বনি
তাড়নজাত ধ্বনি- : ‘উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগের নিচের দিক বা তলদেশ ওপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে দ্রচত আঘাত করে বা তাড়না করে উচ্চারিত হয়। এজন্য এদেরকে তাড়নজাত ধ্বনি বলে। মূলতদ্রচত উচ্চারণ করলে যে মিলিত রূপ পাওয়া যায় তাইএর উচ্চারণ। একইভাবে’, ‘’-এর মিলিত উচ্চারণ
পার্শ্বিক ধ্বনি- : ‘উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ উপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে ঠেকিয়ে জিহবার দুপাশ দিয়ে বাতাস বের করে দেয়া হয় দুপাশ দিয়ে বাতাস বের হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে
আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : , , , , এদের উচ্চারণের সময় এবং  কোন ধ্বনির সঙ্গে থাকলে তাদের উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে বাতাস বের হওয়ার সময় কিছু বাতাস নাক দিয়ে বা নাসারন্ধ্র দিয়েও বের হয়। উচ্চারণ করতে নাক বা নাসিক্যের প্রয়োজন হয় বলে এগুলোকে বলা হয় আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি
পরাশ্রয়ী বর্ণ : ,, এই ৩টি বর্ণ যে ধ্বনি নির্দেশ করে তারা কখনো স্বাধীন ধ্বনি হিসেবে শব্দে ব্যবহৃত হয় না। এই ধ্বনিগুলো অন্য ধ্বনি উচ্চারণের সময় সেই ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়। নির্দেশিত ধ্বনি নিজে নিজে উচ্চারিত না হয়ে পরের উপর আশ্রয় করে উচ্চারিত হয় বলে এই বর্ণগুলোকে পরাশ্রয়ী বর্ণ বলে
নিচে স্পর্শধ্বনির ( অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি) একটি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা ছক আকারে দেয়া হলো-



স্পর্শধ্বনি/ বর্গীয় ধ্বনি (বর্গগুলো এই পর্যন্ত সীমিত)

নাম
উচ্চারণ প্রণালী
অঘোষ
 ঘোষ
নাসিক্য

অঘোষ
অঘোষ
ঘোষ
অল্পপ্রাণ
মহাপ্রাণ
অল্পপ্রাণ
মহাপ্রাণ

অল্পপ্রাণ
মহাপ্রাণ
মহাপ্রাণ
-বর্গীয় ধ্বনি
(কণ্ঠ্য ধ্বনি)
জিহবার গোড়া নরম তালুর পেছনের অংশ স্পর্শ করে




-বর্গীয় ধ্বনি
(তালব্য ধ্বনি)
জিহবার অগ্রভাগ চ্যাপ্টা ভাবে তালুর সামনের দিকে ঘষা খায়


-বর্গীয় ধ্বনি
(মূর্ধন্য ধ্বনি)
জিহবার অগ্রভাগ কিছুটা উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ স্পর্শ করে


-বর্গীয় ধ্বনি
(দন্ত্য ধ্বনি)
জিহবা সামনের দিকে এগিয়ে ওপরের দাঁতের পাটির গোড়া স্পর্শ করে


-বর্গীয় ধ্বনি
(ওষ্ঠ্য ধ্বনি)
দুই ঠোঁট বা ওষ্ঠ অধর জোড়া লেগে উচ্চারিত হয়













·         উল্লেখ্য, কণ্ঠ্য ধ্বনিকে জিহবামূলীয় এবং মূর্ধণ্য ধ্বনিকে দন্তমূল প্রতিবেষ্টিত ধ্বনিও বলে

অন্তঃস্থ ধ্বনি : , , , - এদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয়। তবে অন্তঃস্থএখন আর বর্ণমালায় নেই, এবং এখন আর এটি শব্দে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। তবে ব্যাকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত সন্ধিতে এর প্রয়োগ দেখা যায়
কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ
+ = ক্ত
+ = জ্ঞ
+ = ত্ত
+ = ন্থ
+ = রু
+ = ষ্ম
+ = হু
+ = ক্ষ
+ = ঞ্জ
+ = ত্থ
+ = ন্ধ
+ = রূ
+ = ষ্ণ
+ = হৃ
+ = ক্য
+ = ঞ্চ
+ = ত্ম

+ = র্ধ
+ = স্র
+ = হ্ব
+ = ক্র
+ = ঞ্ছ
+ = ত্র
+ = ব্ধ
+ = ল্ল
+ = স্ন
+ = হ্ণ
+ = গু
+ = ট্ট
++ = ত্রু
+ = ভ্র

+ = স্ব
+ = হ্ন
+ = ঙ্গ
+ = ণ্ড
+ = দ্য
++ = ভ্রু
+ = শু
+ = স্ত
+ = হ্ম
+ = ঙ্ক

+ = দ্ম
+ = ম্ব
++ = শ্রু
+ = স্য



+ = দ্ধ

++ = শ্রূ
+ = স্থ


No comments

Powered by Blogger.